জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্র জানায়, দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোটাতাজাকরণ কর্মসূচির আওতায় খামারিদের কাছে ২৯ হাজার ৫৩২টি পশু মজুত রয়েছে। জেলায় ২৪ হাজার ৫০০টি পশুর চাহিদা রয়েছে। জেলার কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে ৫ হাজার পশু বেশি থাকবে।
সূত্র আরও জানায়, ছোট বড় মিলে জেলার তিনটি উপজেলায় পশুর খামার রয়েছে ৪ হাজার ১৪৩টি। এর মধ্যে জেলা সদরে এক হাজার ৩৮৩টি, লোহাগড়ায় ২ হাজার ২২২টি এবং কালিয়া উপজেলায় ৫৮৩টি ছোট-বড় পশুর খামার রয়েছে। এসব খামারে বিক্রয় উপযোগী মজুত পশুর মধ্যে গরু রয়েছে ১৮ হাজার ৮০১টি, ছাগল ১০ হাজার ৭৩১টি। ছোট বড় মিলে জেলায় পশুর হাট রয়েছে ৮টি।
জেলা শহরের সবচেয়ে বড় মাইজপাড়া পশুরহাটের ক্রেতা-বিক্রেতা ও ইজারাদাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, শুক্রবার (১০ জুলাই) হাটে গরু উঠলেও বেচাকেনা তেমন শুরু হয়নি। মাইজপাড়া পশুর হাটের ইজারাদার মো. আলমগীর সিদ্দিকী ও ফরিদুল হক বলেন, 'এই হাটটি আমরা কয়েকজন ইজারাদার মিলে ৯৫ লাখ টাকা দিয়ে এক বছরের জন্য কিনেছি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দুই মাসের বেশি সময় হাট বন্ধ থাকায় এবং কোরবানিকে সামনে রেখে অন্য বছরের তুলনায় এ বছর গরু-ছাগল বেচা-কেনা একেবারে কম থাকায় আমরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।'
জেলার মাইজপাড়া, মাদ্রাসা-নাকশি, পহরডাঙ্গা, লোহাগড়া কোরবানির পশুর হাট সূত্রে জানা যায়, এসব হাটও তেমন জমে উঠেনি। তবে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্য জেলা থেকে কিছু গরু ব্যবসায়ী এসে স্বল্প পরিসরে গরু কেনা শুরু করেছেন। বাজারে ১১০ থেকে ১২০ কেজি মাংস হবে এমন গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা।
জেলার সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের গরুর খামারি (কৃষক) প্রদ্যুৎ কুমার ঘোষ জানান, তার খামারে ৯টি বিক্রিযোগ্য গরু রয়েছে। তার খামারে থাকা একটি গরুর দাম হাকছেন এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে ক্রেতারা দাম করেছেন এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। এ রকম দামের আরও দুটি গরু রয়েছে তার খামারে। এ বছর কোরবানিকে সামনে রেখে ক্রেতার সংখ্যা একেবারেই কম। করোনাভাইরাসের কারণে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ন্যায্য দামে গরু বিক্রি না হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সদর উপজেলার আউড়িয়া ইউনিয়নের সীমাখালী গ্রামের কৃষক রকিবুল হাসান জানান, বাইরের ব্যাপারিদের কাছে ইতোমধ্যে তিনি একটি গরু এক লাখ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এখনও খামারে ৪টি গরু বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে। ঈদের আর বেশি দিন বাকি না থাকলেও খামারিদের কাছে অন্য বছরের মতো আসছেন না কোনও ব্যাপারি। তিনি আশঙ্কা করেন এবার গরুর চাহিদা কম থাকবে এবং ভালো দাম পাওয়া যাবে না।
একটি সূত্রে জানা যায়, গরুর পাশাপাশি ছাগলও ঊঠেছে হাট-বাজারে। ১৫ থেকে ২০ কেজি মাংস হবে এমন ছাগল ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম করতে দেখা গেছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মারুফ হাসান জানান, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দ্রুত সময়ে যাতে পশু ক্রয় করা যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য ইজাদারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোরবানির পশু বেচা-কেনায় জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে শুক্রবার (১০ জুলাই) অনলাইন অ্যাপস এর উদ্বোধন হয়েছে। গত বছরের ন্যায় এ বছরও জেলায় মোট ২৭০ জন খামারিকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভেটেরিনারি সার্জনের নেতৃত্বে ৬টি টিম ১৫ জুলাই থেকে হাট-বাজারগুলোতে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে।