কোরআন শিক্ষার ফেরিওয়ালা (ভিডিও)

দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে অনেকটা নিভৃতে কোরআন শিক্ষা দিচ্ছেন হাফেজ আব্দুল হান্নান। মানুষকে কোরআনে দীক্ষা দিয়ে আনন্দ পান কুষ্টিয়ার মিরপুর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের সুলতানপুর গ্রামের এই বাসিন্দা। তবে কোরআন পড়ানোর জন্য কোনও পারিশ্রমিক নেন না তিনি।

বাবার কাছ থেকে পাওয়া এককাঠা জমিতে নিজের টাকায় গ্রামে একটি মক্তব গড়ে তুলেছেন হাফেজ আব্দুল হান্নান। ভোরের আলো ফুটলেই এখানে কোরআন শিক্ষা কার্যক্রম চলতে থাকে। প্রতিদিন বিকালে গ্রামের গোরস্থান ময়দানে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষকে দ্বিতীয় দফা কোরআন শেখান তিনি।

2

একসময় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়াতেন হাফেজ আব্দুল হান্নান। ১৯৮৪ সালে বাড়ির উঠানে গ্রামের ছেলেমেয়েদের কোরআন শেখানো শুরু করেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৮৬ সালে বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে একটি মাটির ছাপড়া ঘর বানিয়ে শিক্ষাদান অব্যাহত রাখেন।

১৯৯৫ সালে বাবা আব্দুল আজিজ শেখ ছেলে হান্নানকে এককাঠা জমি দেন। এতে গড়ে তোলা মক্তবে এখন বিভিন্ন বয়সী মানুষ পড়তে আসেন।

হাফেজ আব্দুল হান্নান জানান, নিজের গ্রাম ছাড়াও আশপাশের এলাকার কয়েক হাজার মানুষকে বিনা সম্মানীতে কোরআন পড়িয়েছেন। যেসব শিক্ষার্থীর কোরআন শরীফ কেনার সামর্থ্য নেই তাদের বিনামূল্যে পবিত্র গ্রন্থটি উপহার দিয়েছেন তিনি।

সুলতানপুর গ্রাম ও আশপাশের এলাকার কোনও পুরুষ মারা গেলে দাফন-কাফন, গোসল ও জানাজাসহ সব কাজে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করেন মানুষটি।

স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করে বছরে ২০ মণ ধান পান হাফেজ আব্দুল হান্নান। এছাড়া নিজের দুই বিঘা জমিতে চাষাবাদ করে সংসার চলে যায়।

বিনা সম্মানীতে পড়ানো প্রসঙ্গে হাফেজ আব্দুল হান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “যখন কোরআনে দীক্ষা নিয়েছি তখন আমাদের শিক্ষক একদিন বলেন, ‘যে নিজে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয় সে রাসূল (সা.)-এর কাছে উত্তম ব্যক্তি ।’ তখন থেকে মানুষকে টাকা ছাড়া কোরআন পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন কোরআন শিক্ষাদানের কাজটি করে যেতে চাই।”

1