ঝড়ের মধ্যেও মাঝনদীতে জেলেরা(ভিডিও)

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে উত্তাল সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার নদী ও সাগর। এর মধ্যেই মোংলার পশুর নদে সারি সারি মাছ ধরার নৌকা! দেখে মনে হবে মাছ ধরার উৎসব চলছে। কয়েক শ’ জেলের জাল-দড়ি নিয়ে মাছ ধরার এই দৃশ্য বাংলা ট্রিবিউনের ক্যামেরায় বন্দি হয়েছে। বুধবার (২৬ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলার কানাই নগর এলাকায় তাদের মাছ ধরতে দেখা যায়।

ইয়াসের প্রভাবে একদিকে ঝড়ো বাতাস, অন্যদিকে উত্তাল নদীর পানি। এই পরিস্থিতিতে মাঝ নদীতে কেন জেলেরা? এর উত্তর খুঁজতে নদীর মাঝেই ঝুঁকি নিয়ে এই প্রতিবেদকের আছড়ে পড়া ভাঙা ভাঙা ঢেউ টপকে জেলেদের কাছে যাওয়া। কথা হয় জেলে নির্মল চন্দ্র মণ্ডল (৫২), তারাপদ রায় (৪৪) ও রবিউল শেখের (২৪) সঙ্গে। চোখে মুখে বিষণ্নতার ছাপ থাকলেও এসব জেলেদের মাঝে ঝড়ের আতঙ্ক নেই। ক্ষুধার নিবারণের চিন্তায় ভারাক্রান্ত তাদের মন। একেক জনকে ছয় থেকে সাত জনের খাবার জোগাড় করেই ঘরে ফিরতে হবে। সেজন্যই ঝড়ের মুখেই মাছ ধরা। ‘এসব ঝড়কে ভয় করলে কি আর সংসার চলবে?’ বলেন জেলে নির্মল। ছেলেমেয়েসহ ছয় জন ঘরে আছে। আহার জোগাড় করে তাদের ক্ষুধার যন্ত্রণা মেটানোই তার দায়িত্ব।

তাই বলে এই ঝড়ের মধ্যে মাঝ নদীতে কেন? জানতে চাইলে অপর জেলে তারাপদ রায় বলেন, ‘ভাইরে ক্ষুধার জ্বালা কি আর ঝড় মানে?’

জেলে রবিউল শেখ বলেন, ‘ঝড় চলে গেলে হয়তো প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু খাবার পাবো, কিন্তু এখন কী খাবো? তাই মাঝনদী থেকে যে মাছ পাবো, তা বিক্রি করে চাল কিনবো।’

ওদিকে এসব জেলেদের কাছ থেকে মাছ নিয়ে বিনিময়ে তাদের টাকা দেওয়ার জন্য নদীপাড়ের কানাই নগরে অপেক্ষায় বসে আছেন সুজন মণ্ডল নামে এক ফড়িয়া। তিনি বলেন, ‘তাদের মতো আমাদেরও সংসার আছে, জেলেদের কাছ থেকে এই মাছ কিনে তা আড়তে বিক্রি করে আমারও জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে।’

ঝড়ের মধ্যেও জেলেরা মাঝনদীতে, এ তথ্য জানালে মোংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কমলেশ মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমিও কিছুক্ষণ আগে জানতে পেরেছি। নদী থেকে তাদের ফিরে আসার জন্য খবর পাঠিয়েছি।’ এসব জেলেদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তবে সুন্দরবন সংলগ্ন পশুর নদে জেলেদের মাছ ধরার বিষয়ে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা স্থানীয় মৎস্য দফতর ও কোস্টগার্ডের দেখার কথা। বিষয়টি আমাদের মধ্যে পড়ে না।’

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে বুধবার বৃষ্টি না ঝড়লেও প্রচণ্ড গতিতে বাতাস বয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত মোংলা উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্রে দুর্গতদের আশ্রয় নেওয়ার খবর মেলেনি। সতর্ক সংকেত পূর্বাভাস অনুযায়ী তিন নম্বরই আছে।

ভিডিও: 

www.facebook.com facebook.com