কমে গেছে গরুর দাম, হতাশায় খামারিরা

কোরবানির গরু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন মাগুরার খামারিরা। দীর্ঘদিন লকডাউন থাকায় অনেকেই বাধ্য হয়ে কম দামে গুরু বিক্রি করেছেন। তারপরও হাটে উঠলে হয়তো কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন—এমন আশায় বসে আছেন অনেকে।

মাগুরা পশুসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর মাগুরায় মোট ২৯ হাজার ৫৫০টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তত করেছেন খামারিরা। অথচ স্বাভাবিকভাবে জেলায় চাহিদা রয়েছে ২১ হাজার ৭০০টি গরুর। অর্থাৎ, আট হাজার ৫৫০টি গরু অবিক্রিতই থেকে যাবে।

অভাব-অনটন থেকে মুক্তির আশায় চার বছর ধরে গরু লালন-পালন করেছেন সদর উপজেলার জগদল গ্রামের হালিমা বেগম। তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন, গরু বিক্রি করে নতুন একটা গোয়াল ঘর তুলবেন। কিন্তু তিনি হতাশ।

হালিমা বেগম বলেন, এত দিন গরু লালন-পালন করে ভালো দাম পাচ্ছি না। ব্যাপারি আসে না। যাও আসে ভালো দাম বলে না। অথচ গরুর খাবারের দাম বেড়েই চলেছে। সব খাবার গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। বর্তমানে দিনে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার খাবার লাগছে।

দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন মাগুরার খামারিরা

সদর উপজেলার ইছাখাদা গ্রামের খামারি শহীদুল ইসলাম বলে, গত বছর পাঁচটি গরু প্রস্তুত করে কোরবানিতে এক লাখ টাকা ক্ষতিতে বিক্রি করেছি। ভেবেছিলাম এবার ক্ষতি পুষিযে নেবো। তাই পাচটি গরু পালন করছিলাম। কিন্তু লকডাউনের কারণে এখন পর্যন্ত কোনও ব্যাপারি গরু দেখতেও আসেনি। অভাবের কারণে দুইটি গরু কেনা দামে বিক্রি করে দিয়েছি। অথচ এর পেছনে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী এলাকার খামারি নিজাম উদ্দিন বলেন, দুই লাখ টাকা দিয়ে চারটি গরু কিনে মোটা করেছি। এতে খরচ হয়েছে আরও প্রায় এক লাখ টাকা। কিন্তু কোনও গরুই এখনও বিক্রি হয়নি। ব্যাপারিরা যা দাম বলছে তাতে খরচও উঠবে না।

মহম্মদপুরের খামারি নওয়াব আলী জানান, প্রতি বছর ঈদের ১৫ দিন আগে থেকেই ব্যাপারিরা গরু কেনা শুরু করে। এসব গরু দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হয়। লকডাউনের কারণে এবছর বাইরে থেকে কোনও ব্যাপারি আসতে পারেনি। যে কয়দিন হাতে আছে, তাতে স্থানীয় হাট ছাড়া উপায় নেই। মানুষের হাতের অবস্থাও ভালো না। নিশ্চিত এবারও লোকসানে গরু বিক্রি করতে হবে।

জেলা পশুসম্পদ কর্মকর্তা ড. আনোয়ারুল করিম বলেন, গরুর খাবারের দাম বেড়েছে এটা ঠিক। লকডাউনের কারণে এবার ব্যাপারিদের আগমন নেই বললেই চলে। তবে অনলাইনে গরুর কেনাবেচা বেশ প্রসার লাভ করেছে। যেহেতু সবখানে সরকার হাটের ব্যবস্থা করেছে। আশা করছি খামারিরা ভালো দামেই পশু বিক্রি করতে পারবে।