বেড খালি নেই, তবু জীবন বাঁচাতে হাসপাতালে আসার আহ্বান

কুষ্টিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়ছে। জেলা শহরে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকার পর এবার উপজেলা ও গ্রাম এলাকাতেও বাড়ছে রোগী। তবে আক্রান্তের তুলনায় হাসপাতালে শয্যা কম, হাসপাতালের ২০০ বেডেই রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় জেলায় তিন হাজার রোগী এখনও বাসা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় প্রাণ বাঁচাতে হাসপাতালে বেড না থাকলেও চিকিৎসা নিতে রোগীদের হাসপাতালে আসার জন্য বলছে কর্তৃপক্ষ।

তবে রোগী ও স্বজনরা বলছেন, হাসপাতালে বেড না থাকা, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, বেড পেতে তদবির করাসহ চিকিৎসা নিতে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের। এ কারণে একেবারে অপরাগ না হলে তারা হাসপাতালে যাচ্ছেন না। 

সদরের মজমপুর এলাকার রাজু আহমেদ জানান, তিনি গত ২০ দিন ধরে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১০ জুলাই তার করোনা শনাক্ত হয়। কিন্তু তিনি হাসপাতালে ভর্তি হননি। সাহস করে বাসাতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের পরিবেশ ভালো না। আর স্বাভাবিকভাবে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কঠিন। তাই বাসায় থেকেই পরিবারের সদস্যদের সার্বিক সহায়তায় সুস্থ আছেন। তিনি ২৫ জুলাই দ্বিতীয়বার নমুনা জমা দিয়েছেন। এখনও তার করোনার সব উপসর্গই রয়েছে। শরীর খুবই দুর্বল। সুস্থ থাকলেও ভয়ে আছেন তিনি। 

তবে চিকিৎসকরা বলছেন, করোনায় একজন রোগী আক্রান্তের পর একেবারে শেষ স্টেজে গিয়ে হাসপাতালে আসছেন। এ অবস্থায় রোগীর জন্য বিশেষ কিছু করার থাকে না। তাই রোগীদের কষ্ট ও ভোগান্তি মেনে নিয়েই সুস্থ হতে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।

জেলার সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের চেষ্টায় কোনও ঘাটতি নেই। কিন্তু লোকজন কথা শুনতে চায় না। রোগী ও স্বজনরা কথা শুনলে পরিস্থিতি আরও নিয়ন্ত্রণ থাকতো। উপসর্গ দেখা দিলে বা আক্রান্ত হওয়ার পরও ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতেই থাকতে চান রোগীরা। কিন্তু হাসপাতালে এলে তাদের অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া যেতো। যেটা বাড়িতে বসে পাওয়ার সুযোগ নেই। যখন শ্বাসকষ্ট প্রচণ্ড হয়, তখন তারা হাসপাতালে আসছেন। কিন্তু তড়িঘড়ি পদক্ষেপে তাদের ঝুঁকিমুক্ত করা কঠিন হয়। তাই উপসর্গ দেখা দিলে ঝুঁকি নিয়ে বাড়িতে না থেকে হাসপাতালে রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দরকার। এছাড়া কুষ্টিয়ার হাসপাতালে রাজবাড়ী-চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে রোগী আসছে। সবাইকে সেবা দিতে চিকিৎসক ও কর্মীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন।

সিভিল সার্জন আরও বলেন, উপসর্গ বা শনাক্ত হওয়া রোগীর অক্সিজেন লেভেল ঠিক রাখা জরুরি। এ কারণে হাসপাতালে রোগীদের রাতেও অক্সিজেন সাপোর্টে রাখার বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে। অনেক রোগী আছে, শনাক্ত হওয়ার পরও সুস্থ থাকেন। তাদেরকেও না ছেড়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখার জন্য বলা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু স্বাস্থ্যকর্মী উদাসীনতা দেখাচ্ছেন। ফলে সমস্যা বাড়ছে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তিনি জানান, কুষ্টিয়ায় দৈনিক গড়ে ৪০০ জনের মতো শনাক্ত হচ্ছেন। এতে বোঝা যায় সংক্রমণ ভয়াবহ হয়েছে। শনাক্ত বেশি হওয়ার কারণে মৃত্যুও বাড়ছে। 

করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছ। লকডাউন কঠোরভাবে পালনে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।’

এদিকে, কুষ্টিয়ায় গত ২৬ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত আরও ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাজবাড়ী ও চুয়াডাঙ্গার একজন করে রয়েছেন। একই সময়ে উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও পাঁচ জন। গত ২৬ জুলাই ৬৬৬টি নমুনা পরীক্ষায় ২২৩ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। 

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক দফতরের তথ্যে জানা গেছে, করোনায় এ পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলায় ১৩ হাজার ৪৪৮ জন আইসোলেশনে ছিলেন। এর মধ্যে ১০ হাজার ১১৮ জন ছাড়পত্র নিয়েছেন। আর হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন দুই হাজার ৫৯২ জন। সকলেই ছাড়পত্র নিয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন ৩১ জন। ছাড়পত্র নিয়েছেন চার জন। 

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে আরও জানা যায়, ২৬ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ১৯৯ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় এ জেলায় করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন ২২৩ জন। জেলায় করোনা পজিটিভ চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে ২০০টি বেড রয়েছে। এর মধ্যে চারটি আইসিইউ ও ছয়টি এইচডিইউ বেড। এ জেলায় ২৬ জুলাই সকাল পর্যন্ত ১৩ হাজার ৪২১ জন করোনা পজিটিভের মধ্যে ৯ হাজার ৫২৬ জন সুস্থ হয়েছেন। আর মারা গেছেন ৫০৮ জন। এখনও তিন হাজার ৩৩৮ জন চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে  হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন মাত্র ১৯৯ জন। বাকি তিন হাজার ১৮৮ জনই বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।