মোংলা ইপিজেডে আসছেন বিনিয়োগকারীরা

মোংলা ইপিজেডে আবারও আসতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা। ইতোমধ্যে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছেন তারা। পাশাপাশি গত পাঁচ বছরে রফতানি বেড়েছে দ্বিগুণ। প্রণোদনা, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এবং প্রচারণার কারণে এই ইপিজেডে সুদিন ফিরেছে বলে মোংলা ইপিজেড সূত্রে জানা গেছে।

ইপিজেড সূত্র জানায়, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে মোংলা ইপিজেড প্রতিষ্ঠা করা হয়। ৩০০ তিন একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত ইপিজেডে ২৫৪টি শিল্প-কারখানা তৈরি করা হয়েছে। যার অধিকাংশই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী পরিচালক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শুরুর দিকে পিছিয়ে থাকা মোংলা ইপিজেডকে এগিয়ে নিতে গৃহীত পদক্ষেপের কারণে এখন সুফল পেতে শুরু করেছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে ইপিজেডে বর্তমানে ৩৪টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে রয়েছে। আরও আটটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশ, জাপান, চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডের বিনিয়োগকারীরা প্রায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছেন। এই ইপিজেড থেকে এ পর্যন্ত রফতানি হয়েছে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্যসামগ্রী।

নাজমা আলমগীর আরও বলেন, এখানে আট হাজার ২০৯ বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। এসব শ্রমিক ম্যানিকুইন হেড, উইগ, মার্বেল কলাম, মার্বেল টাইলস, তাঁবু, সার্জিক্যাল গাউন, লাগেজ ও ট্রাভেল ব্যাগ, কার সিট হিটার, সিগারেট ও সিগার, ক্রোকারিজ সামগ্রী, লাইটার, পাটের সুতা ও ব্যাগ, গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ ও বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেন।

ইপিজেডের যে কয়েকটি কারখানা রয়েছে তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভারতীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ভিআইপি। এই কোম্পানির রয়েছে ১০টি
কারখানা। যা থেকে উৎপাদন হয় লাগেজ ব্যাগ এবং অ্যাকসেসরিজ। ভারত, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই ব্যাগ রফতানি করে ২০২০-২১ অর্থবছরে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে শীর্ষ বিনিয়োগ ট্রফি লাভ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

ভিআইপির জিএম মিজানুর রহমান খাঁন বলেন, এই ইপিজেড ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের জন্য খুবই উপযোগী। শুরুতে আমাদের একটি কারখানা থাকলেও সুযোগ-সুবিধা এবং শ্রমিক অসন্তোষ না থাকায় বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে। আমাদের রয়েছে এখন ১০টি কারখানা। অন্য কোম্পানির
তুলনায় শ্রমিকদের বেতনসহ অন্যান্য সুবিধা বেশি দিয়ে থাকে ভিআইপি। এ জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানে এখন সাড়ে পাঁচ হাজার শ্রমিক কাজ করছেন।

মোংলা ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক মাহবুব আহম্মেদ সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অল্প সময়ে এগিয়ে গেছে এই ইপিজেড। গত অর্থবছরে ইপিজেড থেকে ৯২৯ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। যা গত পাঁচ অর্থবছরের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি। একই সময়ে কর্মসংস্থান হয়েছে আট হাজার ২০৯ জনের। এর মধ্যে ৬১ শতাংশ নারী ও বাকি ৩৯ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক।

তিনি আরও বলেন, এই ইপিজেডে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বেপজা’র পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। যেমন অন্যান্য ইপিজেডের তুলনায় মোংলা ইপিজেডের জমি ও ভবন ভাড়া প্রায় অর্ধেক। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কর্ণফুলী, আদমজী এবং কুমিল্লা ইপিজেডে যেখানে বছরে প্রতি বর্গমিটার জমির ভাড়া ২ দশমিক ৫০ ডলার, সেখানে মোংলা ইপিজেডের জমির ভাড়া ১ দশমিক ৪০ ডলার। একইভাবে অন্য ইপিজেডগুলোতে বেপজা স্ট্যান্ডার্ড কারখানা ভবনের বর্গমিটার প্রতি ভাড়া মাসে ৩ দশমিক ০০ ডলার, অথচ মোংলা ইপিজেডের ভাড়া ১ দশমিক ৭৫ ডলার।