১০ বছর ধরে পরিত্যক্ত ভবনে চলছে পৌরসভার কার্যক্রম

মোংলা পোর্ট পৌরসভা প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছর পার হয়েছে। এত বছর পরও নিজস্ব জায়গার অভাবে পৌরসভার ভবন নির্মাণ করা হয়নি। এ অবস্থায় বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিত্যক্ত একটি ভবনে চলছে পৌরসভার কার্যক্রম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের ১ ডিসেম্বর বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে মাসে ২২ হাজার টাকায় ২৭ শতাংশ জমি ভাড়া নিয়ে ৩৬ বছর মোংলা পৌরসভার কার্যক্রম চালানো হয়েছে। পরে ওই জায়গায় দোতলা মার্কেট করে ভাড়া দেয় পৌরসভা। বর্তমানে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের তিনতলা পরিত্যক্ত ভবনে চলছে পৌরসভার কার্যক্রম। এই ভবনটি একসময় বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের হাসপাতাল ছিল। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পরবর্তী সময়ে এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

পৌর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পাওয়ার হাউস রোডের পরিত্যক্ত ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ২০ কক্ষবিশিষ্ট তিনতলা ভবনে চলছে পৌরসভার কার্যক্রম। ভবনের দোতলার উত্তর পাশের কক্ষে বসেন মেয়র, সচিব ও নির্বাহী প্রকৌশলী। নিচতলার দক্ষিণ পাশে অফিস সহায়ক ও নাগরিক সনদপত্র দেওয়াসহ অন্যান্য কাজ চলছে। হোল্ডিং, ট্যাক্স ও কর সেবা চলছে পূর্ব পাশে। উত্তর পাশে ট্রেড লাইন্সেস ও কঞ্জারভেন্সি, দক্ষিণ পাশে চলছে সিভিল প্রকৌশলীর ও পানি শাখার কার্যক্রম।

এখানে সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের বসার জন্য নিচতলায় কয়েকটি বেঞ্চ রাখা হয়েছে। ভবনের তিনতলার বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। সামনের অংশের রড বের হয়ে গেছে। পিলারে ফাটল ধরেছে। ঝুঁকি মাথায় নিয়ে কাজ করছেন মেয়রসহ ৩৫ জন স্থায়ী এবং ১০৫ জন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী।

পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আলী আজম, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়াসিম আরমান, আব্দুল জলিল ও কেয়া বেগম জানান, এই উপজেলার অন্য সব ইউনিয়নেও এর চেয়ে ভালো ভবন আছে। বর্তমানে পৌরসভার রাস্তাঘাট এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। অথচ দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পৌরসভার কাজ চলছে। এদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের তিনতলা পরিত্যক্ত ভবনে চলছে পৌরসভার কার্যক্রম

পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের অনেক দুঃখ। ৪৬ বছরেও আমরা পৌরসভার জন্য কোনও স্থায়ী জায়গায় ভবন করতে পারিনি। ঝুঁকি নিয়ে নাগরিকদের সেবা দিতে হয়। বিগত বছরে যারা মেয়র কিংবা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা ভবন নির্মাণে গুরুত্ব দেননি।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসে নাগরিকসেবা দেওয়া জীবনের জন্য হুমকি উল্লেখ করে মেয়র শেখ আব্দুর রহমান বলেন, এক লাখ ১০ হাজার নাগরিকের নতুন পৌর ভবনের জন্য ৫২ শতাংশ জায়গার প্রয়োজন। গত ফেব্রুয়ারিতে মেয়র হওয়ার পর দায়িত্ব বুঝে নিয়ে আমি ওই জায়গার ব্যবস্থা করার চেষ্টায় আছি। জেলা প্রসাশকের কাছে ৫২ শতাংশ জায়গা চেয়ে আবেদনও করেছি। অন্যদিকে বিকল্প হিসেবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছেও জায়গার জন্য আবেদন করেছি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। জায়গা পেলে পৌরসভার নতুন ভবন করতে পারবো। তখন নাগরিক সেবার কার্যক্রমের গতিশীলতা বাড়বে।

ভাড়া নেওয়া জায়গায় পৌর ভবন না করে মার্কেট করা হলো কেন জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘পৌর ভবনের জন্য ৫২ শতাংশ জায়গার প্রয়োজন। ২৭ শতাংশ ভাড়া জায়গায় ভবন নির্মাণের নিয়ম নেই।’