মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করলেন যমজ দুই বোন

পুলিশে চাকরি পেয়ে মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করলেন দরিদ্র পরিবারের যমজ দুই বোন ফারহানা জাহান ও ফারজানা জাহান। তারা স্বচ্ছতা ও মেধাবীদের সাধারণ কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন।

বুধবার (২০ এপ্রিল) বিকাল ৫টায় সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনস্ ড্রিল শেড মিলনায়তনে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ পরীক্ষা ২০২২-এর চুড়ান্ত ফলাফলে তাদের নাম প্রকাশ করেন জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান।

অত্যন্ত গরিব পরিবারের সদস্য থেকে ঘুষ ও তদবির ছাড়াই পুলিশের চাকরি হওয়ায় এলাকায় চলছে খুশির জোয়ার।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ফকরাবদ গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মো. আসাদুল ইসলাম ও মোছা. রেহেনা বেগম দম্পত্তির যমজ মেয়ে ফারহানা জাহান ও ফারজানা জাহান। তাদের বড় বোন আফসানা জাহান আঁখি বর্তমানে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে গণিতে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তাছাড়া ফারহানা ও ফারজানা আশাশুনি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির নিয়মিত ছাত্রী।

জানা গেছে, একসময় চরম হতাশায় ডুবে থাকা পরিবারটির ত্রাতা হয় যমজ দুই বোন ফারহানা ও ফারজানা। তাদের পিতা ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর রাতে স্থানীয় বড়দল বাজারে সাঈদী-নিজামীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে জেলাব্যাপী তাণ্ডব ছড়ানো জামাত-শিবিরের হামলার শিকার হয়ে দুই পা হারায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি উপার্জনহীন হয়ে বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় থাকায় তাদের দিন চলে হতাশায়। তারপর তাদের সংসারের হাল ধরেন মা রেহেনা বেগম। তিনি শুধু হাতের কাজ ও দর্জির কাজ করে সেই থেকে আজ পর্যন্ত তিন কন্যাসহ পাঁচ জনের সংসার চালান।

২০১৪ সালে তাদের পিতার চিকিৎসা খরচ বাবদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই লাখ টাকা অর্থ সহায়তা করেন। ২০১৩ সালে যমজ দুই বোনের পিতা আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক ছিলেন। আর বর্তমানে ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

সদ্য বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগ পাওয়া যমজ দুই বোন ফারহানা ও ফারজানা বলেন, ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল পুলিশে চাকরি করার। অবশেষে আমাদের সেই ইচ্ছা আল্লাহ পূরণ করেছেন। চাকরি করে আমরা দুই বোন আমাদের মা-বাবার দু:খ লাঘব করবো। সেজন্য সবার দোয়া চাই।

ফারহানা ও ফারজানার মা মোছা. রেহেনা বেগম বলেন, অনেক কষ্ট করে মেয়েদের মানুষ করেছি। একসময় মনে হতো কিভাবে তাদের মুখে দুই বেলা দুই মুঠো ভাত দেবো। মেয়েদের পিতা উপার্জন ক্ষমতা হারালে বহু কষ্টে শুধু হাতের কাজ ও দর্জির কাজ করে তিন মেয়েকে বড় করেছি। ছোটবেলা থেকে আমার যমজ দুই মেয়ের ইচ্ছা ছিল পুলিশ হবে। তাদের সেই ইচ্ছা আল্লাহ পূরণ করেছেন। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইজিপি ও জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমানকে অনেক ধন্যবাদ। মাত্র ১২০ টাকা খরচ করে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সাধারণ কোটায় আমার দুই মেয়ে পুলিশে চাকরি পেয়েছে।

তাদের পিতা আসাদুল ইসলাম ফকির বলেন, আমি বেকার। আমার স্ত্রী দর্জি কাজসহ হাতের কাজ জানেন। তার আয়ে এবং সরকারি বিভিন্ন সাহায্য পেয়ে আমাদের মেয়ে তিনটিকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ালেখা করাচ্ছি। বড় মেয়ে আফসানা আঁখি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ গণিতে অনার্স করছে। আমার মেয়েরা টিউশনি করে পরিবারে সাহায্য করে। এই দুঃসময়ে দুই মেয়ের পুলিশের চাকরি হওয়ায় আমি ও আমার পরিবারসহ এলাকার মানুষ খুবই খুশি হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার দুই মেয়ে পুলিশে যাতে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পেতে পারে তার জন্য সবার দোয়া কামনা করছি। সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।