১৩ বছরেও শুকায়নি আইলার ক্ষত 

খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রায় ২০০৯ সালের এই দিনে আঘাত হানে ভয়াল ঘূর্ণিঝড় আইলা। ১৩ বছর পরও আইলার আঘাতের ক্ষত শুকায়নি। ক্ষত ও ক্ষতির চিহ্নগুলো উপকূলবাসী আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন।

বুধবার (২৫ মে) উপজেলার অনেক গ্রাম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘আইলা দিবস’ পালিত হচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে ১৩ বছর আগের সেই দিনের ভয়াবহ স্মৃতির কথা জানাতে এই আয়োজন করা হয়েছে। এদিকে এক যুগেরও বেশি সময় পার হলেও, আইলার আঘাতে অনেক বড় বড় ক্ষত রয়ে গেছে। কিন্তু সরকার পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের আরও বেশি মনে করিয়ে দেয় সেই দিনগুলোর কথা।

জানা গেছে, আইলার আঘাতে পবনার বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে দক্ষিণ মঠবাড়ী গ্রাম দুই ভাগ হয়ে সৈয়দখালী নামক একটি শাখা নদী তৈরি হয়। যেখানে আজও স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা প্রতিদিন খেয়া নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। 

অন্যদিকে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের জোড়সিং গ্রামের নতুন বাজার সংলগ্ন হারেজ খালিতে আজও খেয়া পারাপার অব্যাহত আছে এবং প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক মানুষ ঝুঁকির মধ্যে খেয়া পারাপার হয়ে থাকেন। একই ভাবে আইলার ক্ষতচি‎‎হ্ন আজও দৃশ্যমান বিভিন্ন রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ একাধিক ঘরবাড়িতে। এছাড়া উপজেলার ৪ ও ৫ নম্বর কয়রা এবং হরিহরপুর, পদ্মপুকুর, গাতীরঘেরি, হাজত খালী গ্রামের অনেক পরিবার আজও বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করছেন।

আইলার আঘাতের ১৩ বছর পরও হরিহরপুর গ্রামের কপোতাক্ষ নদীর বেড়িবাঁধে বসবাস করছেন ৭২ বছর বয়সী আনার মোল্যা ও তার স্ত্রী ফুলি বিবি। 

তারা জানা, আইলার আঘাতে তাদের কয়েক কাঠা জমির ওপর করা ঘরবাড়ি চোরামুখা গেটের খালে চলে যায়। সেখানে এখন ১০-১২ হাত পানি। তাদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। তারা অন্য এলাকায় বসবাস করছেন। 

আনার মোল্যা বলেন, ‘আমরা বুড়ো-বুড়ি আইলা আঘাত হানার পর থেকে বাঁধের উপর ঝুপড়ি ঘরে থাকি। কপোতাক্ষ নদী চরে চিংড়ি পোনা ধরে কোনোরকমে দুজনে খেয়ে বেঁচে আছি। এখন আর কেউ খোঁজ নেয় না। সরকারি ঘর পেলে সেখানে জীবনের বাকি দিনগুলো কাটাতাম।’

শুধু আনার মোল্লা নয়, ৫ নম্বর কয়রা বাঁধের ওপর বসবাস করেন ৭৫ বছর বয়সী অন্ধ রহিম বকস, করিমন বিবি, জহিরোন ও ভদিবিবিদেরসহ অনেকে। অথচ একদিন তাদেরও ঘর-বাড়ি ছিল। আইলার আঘাতে ভাঙনে সবকিছু কয়রা নদী গ্রাস করে নিয়েছে।

কয়রা সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম বাহারুল ইসলাম জানান, কয়েক মাস হলো তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত হয়েই ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট সংস্কার করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ শুরু করেছেন। প্রাকৃতিক দূর্যোগে গৃহহারা ভূমিহীন এবং এ ধরনের অসহায় পরিবারের তালিকা করে দ্রুত ঘর নির্মাণ করা হবে। সেই সঙ্গে সকল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে সহযোগিতা করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরাসহ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে ৫৯৭ কিলোমিটার বাঁধ জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায়। আইলার পর উপকূলের মানুষের দাবি ছিল টেকসই বেড়িবাঁধ। কিন্তু ১৩ বছরেও ত নির্মিত হয়নি। আইলার আঘাতে কয়রার পাউবোর বেড়িবাঁধের ২৭টি পয়েন্ট জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে লোনা পানিতে তলিয়ে যায়। আইলার ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও মানুষ এখনও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।