‘নড়াইলের ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা’

ফেসবুকে ছাত্রের দেওয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে নড়াইলে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় গাফিলতি থাকলে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়। তিনি বলেন, ‘ঘটনার তদন্তে জেলা পুলিশের একটি ও জেলা প্রশাসনের অপর একটি কমিটি কাজ করছে। তদন্তে ঘটনার দিন শিক্ষক অবমাননার সময় পুলিশের গাফিলতি প্রমাণ হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ 

বুধবার (২৯ জুন) বাংলা ট্রিবিউন প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

পুলিশ সুপার দাবি করেন, ওইদিন ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি খুবই অস্বাভাবিক ছিল। সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা চেষ্টা করেছেন বিনা রক্তপাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। জান-মালের কোনও ক্ষতি ছাড়াই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বা অন্য কেউ জড়িত থাকলে বা তাদের গাফিলতি থাকলে তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসবে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। 

নড়াইলে কী হয়েছিল সেদিন, ঘটালো কারা?

এদিকে ঘটনার ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও বাড়ি ফেরেননি মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস।

ওই শিক্ষকের স্ত্রী সোনালি দাস বলেন, গত ১৮ জুন ঘটনার পর আমার স্বামীকে সেফ কাস্টডিতে নেয় পুলিশ। পরদিন পুলিশ তাকে ছেড়েও দেয়। কিন্তু এখনও তিনি বাড়ি ফেরেননি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। তিনি কোথায় আছেন আমরা জানি না।

তবে পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় দাবি করেন, ‘ওই শিক্ষক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে স্থানীয় পুলিশের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি।’ 

লাঞ্ছনার শিকার ওই শিক্ষক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কিনা তা জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, আমার জানামতে তিনি (অধ্যক্ষ) নিরাপত্তাহীনতায় নেই। ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষের বড়কুলার গ্রামের বাড়িতে পুলিশ ডিউটি দেওয়া হয়েছে। 

নড়াইলের সেই শিক্ষক কোথায়? 

ওইদিন ঘটনাস্থলে থাকা বিছালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হিমায়েত হোসাইন ফারুক বলেন, ঘটনার দিন আসলে পুলিশের তেমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতার মধ্যে থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। তারপরও এ ঘটনায় পুলিশ ও জেলা জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রকৃত অপরাধীরা শনাক্ত হয়ে বিচারের মুখোমুখি হবে।

মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক শেখ আকিদুল ইসলাম বলেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমারের সঙ্গে যে অবমাননাকর ঘটনা ঘটেছে তাতে অপমানিত বোধ করছি। তাই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্টের জেরে কলেজে হামলা, তদন্তে কমিটি

পুলিশ ও কলেজ সূত্রে জানা যায়, মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক শিক্ষার্থী ফেসবুক আইডি থেকে ভারতের রাজনীতিবিদ নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে তার বিতর্কিত মন্তব্যকে সমর্থন জানান। পোস্ট দেওয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে ওই শিক্ষার্থী কলেজে আসেন। তখন তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বলেন। কিন্তু মোছেননি। পরে শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জানান। একপর্যায়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কলেজের শিক্ষকদের পরামর্শে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তারা কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। এরপর কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জসহ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে। এ সময় ১০ জন আহত হন। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।