যশোর বোর্ডের সাড়ে ৭ কোটি টাকা লোপাট: হিসাব সহকারী বরখাস্ত

যশোর শিক্ষা বোর্ডে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে সাত কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় পলাতক কর্মচারী আবদুস সালামকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তাকে বরখাস্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বোর্ডের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত চিঠি অফিস আদেশ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আহসান হাবীব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর যশোর শিক্ষা বোর্ডে ধরা পড়ে ৯টি চেক জালিয়াতির মাধ্যমে দুই কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০টাকা লোপাটের ঘটনা। পরে এ ধরনের ঘটনা আরও বের হয়। এতে মোট ৩৮টি চেকে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১০ অক্টোবর এই ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে লিখিতভাবে তৎকালীন হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানান। একই সঙ্গে দুই দফায় প্রায় ৩২ লাখ টাকা ফেরত দেন। অবশিষ্ট টাকা ফেরত দিতে সময়ও প্রার্থনা করেন। 

একই মাসে তাকে যশোর বোর্ড থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বোর্ডের এই অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় ওই মাসের ৯ তারিখে যশোরের দুদক একটি মামলা করে। তাতে তৎকালীন বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন, বোর্ড সচিব প্রফেসর এএম এইচ আর রেজা, হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম, ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের আশরাফুল ইসলাম বাবু ও মেসার্স শাহী লাল স্টোরের আশরাফুল ইসলামসহ মোট পাঁচজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলার এখনও কোনও অগ্রগতি কেউ জানে না।

এদিকে, আব্দুস সালাম অপরাধ স্বীকার করে টাকা জমা দেয়ায় শিক্ষা বোর্ড তার বিরুদ্ধে চাকরিবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করে। একাধিকবার চিঠি ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও উত্তর যথাযথভাবে না পেয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত বোর্ড গঠন করে। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ২০১৮ এর ৩(ঘ) এবং শিক্ষা বোর্ডেও চাকরিবিধি ১৯৯৭ এর ৩৫এর উপবিধি(ঙ)(২)(ক) অনুযায়ী চুরি, আত্মসাৎ ও তহবিল তছরুপ বা প্রতারণার বিষয়ে তদন্ত হয়। 

তদন্ত বোর্ড সকল আইনগত বিধি অনুসরণ করে ঈদুল আজহার আগে রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্টে আব্দুস সালামের অপরাধ সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত হয়। অবশেষে সাত কর্ম দিবসের সময় দিয়ে তাকে চূড়ান্ত কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তার উত্তর না পেয়ে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার বোর্ডের ১৯৯৭ এর ৩৬ (২)(ছ) এবং সরকারি চাকরিবিধি ২০১৮ এর ৪ (৩)(ঘ) মোতাবেক তাকে গুরু দণ্ড দেয়। তাকে স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আহসান হাবীব সাংবাদিকদের বলেন, আড়াই কোটি টাকার ৯ চেকের জালিয়াতিতে আব্দুস সালামের সম্পৃক্ততা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। অন্যগুলোর সম্পৃক্ততার প্রমাণ সম্পন্ন হয়নি। সে কারণে এটা উল্লেখ করা হয়েছে। আর দেনা-পাওয়ার হিসাব সম্পূর্ণ করা হয়নি। এখন সে প্রক্রিয়ায় যাওয়া হবে। বোর্ড তার কাছে পেলে আইনগতভাবে তা উদ্ধার করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, যেহেতু দুদকে মামলা রয়েছে, তাই এই মুহূর্তে আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে সরাসরি ফৌজদারি কার্যবিধিতে মামলা করা যাচ্ছে না। আর দুদক মামলার প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত নিচ্ছে, তবে তারা এখনও কোনও কিছু চূড়ান্ত করেনি।