৫১ বছর সংসারের পর বিয়ের অনুষ্ঠান

মায়ের ইচ্ছে ছিল ঢাকঢোল পিটিয়ে ছেলেকে বিয়ে করাবেন। পাড়া-প্রতিবেশীকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াবেন। বিয়েও করিয়েছিলেন। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে সে সময় ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান করতে পারেননি। এরই মধ্যে মারা গেছেন মা। অবশেষে ৫১ বছর সংসারের পর ঢাকঢোল পিটিয়ে আবারও বর সেজে বিয়ের অনুষ্ঠান করে মায়ের ইচ্ছে পূরণ করলেন ছেলে নুরুল ইসলাম। বর্তমানে তার বয়স ৭৫ বছর।

রবিবার (১৭ জুলাই) কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের কুণ্ঠিরচর গ্রামে অন্যরকম এ বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। নুরুল ইসলাম কুণ্ঠিরচর গ্রামের মৃত হোসেন মন্ডলের ছেলে।

নুরুল ইসলামের বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে তার বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন স্থানীয়রা। একই দিন তার স্ত্রীর বাড়িতেও বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানেও আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।

কুণ্ঠিরচর গ্রামের বাসিন্দা মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘মায়ের মানত পূরণে ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান করেছেন নুরুল ইসলাম। এ উপলক্ষে তার বাড়িতে গ্রামবাসীকে দাওয়াত দেওয়া হয়। ছাগল জবাই করে আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে খাইয়েছেন তিনি।’

বিয়ের অনুষ্ঠানের বিষয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার জন্মের সময় মা মানত করেছিলেন ঢাকঢোল পিটিয়ে বিয়ে করাবেন। কিন্তু সে সময় বিয়ের অনুষ্ঠান করার সামর্থ্য ছিল না আমাদের। এর মধ্যে ২০ বছর আগে মা মারা গেছেন। সম্প্রতি মানত পূরণের স্বপ্ন দেখে আমার ছেলেমেয়েরা। তারা বিষয়টি তাদের মাকে জানায়। এজন্য ছেলেমেয়েদের অনুরোধে বিয়ের অনুষ্ঠান করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ১৯৭১ সালে বিয়ে করেছি। বর্তমানে আমার তিন ছেলে এবং দুই মেয়ে রয়েছে। নাতি-নাতনিও রয়েছে।’

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিয়ের অনুষ্ঠানে ৫০ জন বরযাত্রী ছিল। এর মধ্যে আমার ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনি ও প্রতিবেশীরা কনের বাড়িতে গিয়েছিলাম। আমাদের বাড়িতেও অনুষ্ঠান করে আত্মীয়-স্বজনকে খাওয়ানো হয়েছে। এত বছর পর মায়ের মানত পূরণ করতে পেরে আমি দায়মুক্ত হলাম।’

এ বিষয়ে কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হান্নান বলেন, ‘সকালে নুরুল ইসলামের বাড়ির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা শুনেছি। তবে দাওয়াত পাইনি। স্থানীয়দের কাছে শুনেছি, মায়ের ইচ্ছে পূরণে বিয়ের ৫১ বছর পর অনুষ্ঠান করেছেন নুরুল ইসলাম।’