দুই পুলিশের ‘আত্মহত্যার’ যোগসূত্র তদন্ত করছে পুলিশ

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) লাবণি আক্তারের দেহরক্ষী ছিলেন মাথায় গুলি করে ‘আত্মহত্যা’ করা পুলিশ কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান। পুলিশের দাবি, তারা দুজনই ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। তাদের ‘আত্মহত্যায়’ যোগসূত্র আছে কিনা তা তদন্ত করছে পুলিশ। তদন্তের আগে তাদের মৃত্যুর বিষয়ে কিছুই বলতে চাননি পুলিশের কর্মকর্তারা।

এদিকে, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তাদের ‘আত্মহত্যার’ ঘটনা নিয়ে শহরজুড়ে চলছে আলোচনা। লাবণির বাবার দাবি, স্বামীর সঙ্গে কলহের জেরে লাবণি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। 

তবে মাহমুদুল হাসান কেন ‘আত্মহত্যা’ করেছেন তা জানেন না তার বাবা। এটিকে ‘দুর্ঘটনা’ বলছেন মাহমুদুলের বাবা। এখন পর্যন্ত দুই জনের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তারা।

দুজনের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘খুলনায় থাকাকালে এডিসি লাবণি আক্তারের দেহরক্ষী ছিলেন মাহমুদুল। খুলনা মহানগর পুলিশে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তারা। দেড় মাস আগে বদলি হয়ে মাগুরায় আসেন মাহমুদুল। তবে লাবণি সেখানেই ছিলেন। তিন দিন আগে মাগুরায় এসেছেন। চিকিৎসকের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, দুজন আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে যোগসূত্র আছে কিনা তা তদন্তের আগে বলা যাবে না। ঘটনাটি তদন্ত করছি। তদন্ত ছাড়া মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।’

আরও পড়ুন: কেন ‘আত্মহত্যা’ করলেন লাবণি?

কামরুল হাসান বলেন, ‘বুধবার রাতের ডিউটি শেষ করে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে নিজ নামে ইস্যু করা অস্ত্র দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন মাহমুদুল। পরে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়। পাশাপাশি নানাবাড়ি বেড়াতে এসে বুধবার মধ্যরাতে আত্মহত্যা করেন লাবণি। রাতেই লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে দুই জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার সারঙ্গদিয়া গ্রামে নানাবাড়িতে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ‘গলায় ফাঁস’ দেন লাবণি। তাকে উদ্ধার করে পরিবারের লোকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। রাত ২টার দিকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় পুলিশ।

এদিকে, রাতের ডিউটি শেষে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে মাগুরা পুলিশ লাইনস ব্যারাকে যান কনস্টেবল মাহমুদুল। কিছুক্ষণ পর ব্যারাকের ছাদে নিজের অস্ত্র দিয়ে ‘মাথায় গুলি করেন’। সকাল ৭টার দিকে ব্যারাকের ছাদ থেকে গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ।

আরও পড়ুন: অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার লাবণির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

লাবণি আক্তার (৩৯) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ৬ নম্বর কাদিরপাড়া ইউনিয়নের বরালিদহ গ্রামের খন্দকার শফিকুল আজমের মেয়ে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এডিসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। তিন দিন আগে ছুটিতে মাগুরায় আসেন। বিসিএস ৩০তম ব্যাচের ছিলেন। তার স্বামী তারেক আবদুল্লাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে এখন তিনি ভারতে চিকিৎসাধীন। তাদের সংসারে দুই কন্যাসন্তান রয়েছে।

নিহত মাহমুদুল হাসান (২৩) কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিষাকুন্ডি ইউনিয়নের পিপলবাড়িয়া গ্রামের পুলিশ কনস্টেবল এজাজুল হক খানের ছেলে। কুষ্টিয়া শহরের পুলিশ লাইনসের সামনে তাদের দোতলা বাড়ি রয়েছে। ২০১৯ সালে পুলিশে যোগ দেন মাহমুদুল। দেড় মাস আগে বদলি হয়ে মাগুরায় আসেন।

মাহমুদুল হাসানের বাবা মো. এজাজুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৯ সালে আমার ছেলে পুলিশে যোগ দেয়। দেড় মাস আগে মাগুরায় বদলি হয়। এর আগে খুলনা মেট্রোপলিটনে কর্মরত ছিল। বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ছেলের সঙ্গে মোবাইলে সবশেষ কথা হয়েছিল। তখনও হাসিখুশি ছিল। কিন্তু হঠাৎ কেন আত্মহত্যা করলো বুঝতেছি না। এটি দুর্ঘটনা। এ বিষয়ে আমার কোনও অভিযোগ নেই।’

আরও পড়ুন: পুলিশ লাইনস ব্যারাকের ছাদে পুলিশ সদস্যের গুলিবিদ্ধ লাশ

লাবণি আক্তারের বাবা খন্দকার শফিকুল আজম বলেন, ‌‘দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর সঙ্গে কলহ চলছিল লাবনীর। বিশ্বাস-অবিশ্বাস, স্বামীর চিকিৎসার অর্থ, বাজারসদাই ও সন্তানদের পড়াশোনা এবং ভবিষ্যত নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মনোমালিন্য চলছিল। মেয়েটা খুব জেদি ছিল। যা বলতো, তাই ছিল শেষকথা। যদি বলতো হবে না, তা কোনোভাবেই হতো না। রেগে গেলে থামানো যেতো না। আমার মনে হচ্ছে, পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নিতে চাই না।’

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ও মিডিয়া উইংয়ের মুখপাত্র আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘১৮ জুলাই থেকে ছুটি নিয়ে নানাবাড়ি যান লাবণি আক্তার। তিনি কেন আত্মহত্যা করেছেন, তা আমরা বুঝতেছি না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে পুলিশ।’