চিকিৎসকদের কর্মবিরতি

‘হাসপাতালে এসে দেখি ডাক্তার নেই, এখন কোথায় চিকিৎসা নেবো’

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে মাকে ভর্তি করিয়েছেন কয়রার সোলাইমান হোসেন। তিনি জানান, তার মায়ের মাথায় গাছ পড়েছিল। গত সাতদিন ধরে মাকে নিয়ে এই হাসপাতালে আছেন। বুধবার সকালে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।  

সোলাইমান বলেন, ‘সে সময় সমস্যা বাড়লেও ডাক্তার পাইনি। নার্সরা বলেছেন দুই-তিনদিন ডাক্তাররা আসবেন না।’

সকাল থেকেই খুমেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। খুমেক হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীরা ডাক্তারের দেখা পাচ্ছেন না। জরুরি চিকিৎসক থাকার কথা বলা হলেও ওয়ার্ডে নার্সরাই প্রয়োজনীয় সেবা দিচ্ছেন। একই অবস্থা খুলনার সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের। 

পাইকগাছা থেকে দুর্গা এসেছেন খুমেক হাসপাতালে। তিনি জানান, কিডনি সমস্যার কারণে স্বামীর চিকিৎসা করাতে এখানে এসেছেন। দুই মাস চিকিৎসা করানোর পর কিডনি অপারেশন করিয়েছেন।সকাল থেকে কোনও ডাক্তার পাচ্ছেন না। 

শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলার প্রতিবাদে খুলনার সব হাসপাতালে বুধবার (১ মার্চ) সকাল ৬টা থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসকরা। এই কর্মবিরতি চলবে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সকাল ৬টা পর্যন্ত।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা শাখা এই কর্মসূচি ঘোষণা করে।

বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন চিকিৎসকরা

সাতক্ষীরার মাহবুবুর রহমান এসেছেন খুলনা মেডিক্যালে। তিনি বলেন, ‘স্ত্রীর ক্যানসার। চিকিৎসার জন্য গত তিনদিন ধরে ঘুরছি। বিভিন্ন পরীক্ষা করানো হয়। বুধবার ডাক্তার দেখানো ও কেমো দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এসে দেখি ডাক্তার নেই। এখন রোগীর কী হবে, কোথায় চিকিৎসা নেবো।’

বেসরকারি হাসপাতাল ডক্টরস পয়েন্টেও নেই ডাক্তার। হাসপাতালটির এডমিন ইসমাইল হোসেন পারভেজ বলেন, ‘ডাক্তারদের ধর্মঘটের কারণে কনসালট্যান্ট, প্যাথলজি সেবা ও জরুরি সেবা বন্ধ আছে। শুধু ভর্তি ২৩ জন রোগীকে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হচ্ছে।’

বেসরকারি রাশিদা মেমোরিয়াল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিকের ম্যানেজার আল মামুন হাসান বলেন, ‘ডাক্তারদের ধর্মঘটের কারণে হাসপাতাল ও প্যাথলজির জরুরি সেবা বন্ধ আছে। কেবল ভর্তি থাকা আট রোগীর সেবা দেওয়া হচ্ছে।’

বুধবার সকালে খুমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা মানববন্ধন করেন। তারা পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দেন। মানববন্ধনে বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. বাহারুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজসহ অন্যান্য চিকিৎসকরা বক্তৃতা করেন। 

মঙ্গলবার বেলা ১২টায় বিএমএ ভবন খুলনার কাজী আজহারুল হক মিলনায়তনে সাংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।

বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, ‘গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খুলনার শেখপাড়ায় অবস্থিত হক নার্সিং হোমে অপারেশন চলাকালীন হামলা করে রোগীর স্বজনরা ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। অপারেশন থিয়েটার ভাংচুর করা হয়। এ সময় এক মাস আগে অপারেশন করা রোগীর জটিলতার অভিযোগে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশে কর্মরত এএসআই নাঈম ও তার সঙ্গীরা অপারেশন মাঝপথে বন্ধ করে দেন। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও বিচার দাবি করছি।’

তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকের ওপর হামলাকারী এএসআই নাঈম ও তার সঙ্গীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’