রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে সেখানকার এমআরআই, সিটি স্ক্যান, রেডিও থেরাপিসহ সব আধুনিক মেশিন দীর্ঘদিন অকেজো অবস্থায় পেয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মোস্তাফিজুর রহমান। এতে তিনি হতবাক আর বিস্মিত হয়েছেন।
হাসপাতালের একটি ছাড়া সব লিফট নষ্ট। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসার নামে কি হচ্ছে এখানে তামাশা চলছে।’ বুধবার (৭ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব দেখতে পান এবং এই প্রতিক্রিয়া জানান।
এর আগে যুগ্ম সচিব হাসপাতালে এসেই আন্দোলনকারী নার্সদের তোপের মুখে পড়েন। কয়েকশ নার্স তাদের ডিগ্রি সমমানের মর্যাদার দাবিতে তাকে প্রায় দেড় ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এলে আশ্বাস দিয়ে কোনোরকমে তাদের ম্যানেজ করেন।
হাসপাতাল সূত্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সফর সূচিতে দেখা গেছে, তিনি মূলত দুই কারণে এসেছেন। প্রথমত রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা, সেখানে থাকা অত্যাধুনিক চিকিৎসাদানের মেশিনের কী অবস্থা, কেন অকেজো হলো, কী করা যায়- এসব সরেজমিন পরিদর্শন করা। দ্বিতীয়ত চীনের অর্থায়নে এক হাজার শয্যার হাসপাতালের স্থান নির্ধারণ করা- সে জন্য রংপুর নীলফামারী আর সৈয়দপুরে সম্ভাব্য স্থান দেখা।
দুপুর ১টার দিকে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম শীর্ষ চিকিৎসা কেন্দ্র রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করতে এসে প্রথমে হাসপাতালের ছয়তলা ভবনের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও মেশিনপত্র দেখতে যাওয়ার জন্য হাসপাতালের লিফটে ওঠার জন্য গেলে জানতে পারেন, ছয়টি লিফটের সব অকেজো। একটি মাঝে মাঝে চলে আবার বন্ধ থাকে। একটি লিফট আছে যার বয়স ৪৫ বছর। তিনি লিফট অকেজো কেন জানতে চাইলে কারও কাছে সদুত্তর পাননি।
এরপর যুগ্ম সচিব ড. মোস্তাফিজুর রহমান দুটি রেডিও থেরাপির দুই বিকল মেশিন দেখেন। এরপর একে একে সিটিস্ক্যান, এমআরআইসহ সব মেশিন অকেজো দেখতে পান। কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, দীর্ঘদিন ধরে এসব মূল্যবান মেশিন অকেজো পড়ে আছে। কীভাবে নষ্ট হলো তার কোনও ব্যাখ্যা নেই কারও কাছে। এরপর তিনি দেখতে পান, অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা সর্বাধুনিক মেশিনগুলোর প্যাকেটই খোলা হয়নি। ওগুলো নাকি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
এ সময় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা হাসপাতালের দুরবস্থার কথা বলার জন্য যুগ্ম সচিবের কাছে যেতে চাইলে তাদের কাউকেই সেখানে যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রোগী ও তাদের স্বজনদের।
এ বিষয়ে নীলফামারীর জলঢাকা থেকে আসা মনোয়ারা বেগম জানান, তার স্বামী গুরুতর অসুস্থ। এমআরআই করাতে বলেছে ডাক্তার, কিন্তু মেশিন বিকল থাকায় করাতে পারছেন না। বাইরে করলে অনেক টাকা লাগে, যা তার সামর্থ্য নেই।
একই কথা বললেন গাইবান্ধার কুপতলা এলাকার নওশের আলী। তিনি জানান, সিটি স্ক্যান করাতে পারছেন না মেশিন বিকল হওয়ার কারণে।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, আমি ব্যথিত এবং ক্ষুব্ধ। হাসপাতালের রেডিও থেরাপি, সিটিস্ক্যান, এমআরআই সহ সব মেশিন অকেজো। লিফটগুলো বিকল রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, এই হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার নামে চরম দুর্নীতি আর অনিয়ম হয়েছে। বর্তমান সরকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। প্রধান উপদেষ্টা কনসার্ন আছেন। এ ছাড়াও উপদেষ্টাসহ যারাই আছেন তারা নিরলসভাবে কাজ করছেন।
এই যুগ্ম সচিব বলেন, হাসপাতাল পরিদর্শন করতে আসার মূল উদ্দেশ্যে এখনকার এক্স-রে মেশিনসহ বেশিরভাগ মেশিনপত্র অকেজো হয়ে পড়ে আছে। সব মেশিনের পরিবর্তে নতুন মেশিন স্থাপন করা হবে- যাতে সবাই চিকিৎসা সেবা পায়। আর হাসপাতালে বিদ্যুতের সমস্যা আছে, ভোল্টেজ আপ-ডাউনের সমস্যা- সেটারও সমাধানের পদক্ষেপ নেয়া হবে।
পরিদর্শনকালে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তার সঙ্গে ছিলেন।