সাতক্ষীরায় হঠাৎ টর্নেডোর আঘাত, ৩ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর, কৈখালী ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে হঠাৎ আঘাত হেনেছে টর্নেডো। এতে তিন ইউনিয়নের কালিঞ্চি, পূর্ব কৈখালী, বোসখালী, পশ্চিম কৈখালী, টেংরাখালী ও পারশেখালী গ্রামের তিন শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে বহু গাছপালা। এ সময় কৈখালী ইউনিয়নের কৈখালী গ্রামের রুহুল কুদ্দুস নামে এক জেলে নিখোঁজ হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে আঘাত হানে এই টর্নেডো। এতে বিধ্বস্ত হয়েছে দুই শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি। আরও শতাধিক আধাপাকা বাড়ির টিনের চাল উড়ে গেছে। তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের মুন্সিগঞ্জ গ্রামের মোহন কুমার মন্ডল বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রোদ ছিল। দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ চারদিক অন্ধকার হয়ে ঝড় শুরু হয়। ঝড়ের মধ্যেই টর্নেডো আঘাত হানে। এর তাণ্ডব এতই বেশি ছিল যে, কাঁচা ঘরবাড়ির দেয়াল ধসে গেছে। গাছপালা উপড়ে গেছে। বেশিরভাগ ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে।’

কালিঞ্চি, পূর্ব কৈখালী, বোসখালী, পশ্চিম কৈখালী, টেংরাখালী ও পারশেখালী গ্রামের তিন শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত

রমজাননগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আল মামুন জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের কালিঞ্চি, মধ্যপাড়া, গেটপাড়া, কলোনিপাড়া ও খাসখামারসহ কয়েকটি গ্রামে ৫০টির মতো ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বৃষ্টির সঙ্গে শিলা পড়ে ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অসীম কুমার মৃধা বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের টেংরাখালী, পারশেখালীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্নেডোতে ২০টি মতো ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া আরও ১০টির মতো ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের বোসখালী, পশ্চিম কৈখালী ও কাঠামারিসহ কয়েকটি এলাকার ৫০টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও দুই শতাধিক ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক ঘরবাড়ির চাল উড়ে গেছে। ২০টির মতো কাঁচা ঘর ধসে পড়েছে।’ 

তিনি বলেন, ‘পূর্ব কৈখালী গ্রামের রমজান আলীর ছেলে রুহুল কুদ্দুস নিখোঁজ হয়েছেন। তিনি ঝড়ের সময় সুন্দরবন-সংলগ্ন মামুদো নদে মাছ ধরছিলেন।’

এদিকে, ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শুকনো খাবার ও চাল বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। একইসঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানার জন্য তালিকা করার কথাও বলা হয়েছে।

বিধ্বস্ত হয়েছে তিন শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার হোসেন বলেন, ‘আকস্মিক টর্নেডোর আঘাতে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি আমরা। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে প্রাথমিকভাবে শুকনো খাবার ও চাল বিতরণ করা হবে। একইসঙ্গে তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তালিকা যাচাই-বাছাই করে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে।’ 

জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী বলেন, ‘এটি কালবৈশাখী ঝড়। এ ধরনের ঝড় হঠাৎ শুরু হয়, আবার হঠাৎ থেমে যায়। এসব ঝড়ের তীব্রতা অনেক বেশি। তবে বেশি ক্ষয়ক্ষতির আগেই থেমে যায়।’