দাফনের পরদিন জানা গেলো লাশটি রুবেলের নয় মোজাম্মেলের

সৌদি আরবে মারা যাওয়া যশোরের শার্শা উপজেলার রুবেল হোসেনের কফিনে পাঠানো হয়েছে কিশোরগঞ্জের মোজাম্মেল হকের লাশ। বুধবার (২৬ জুলাই) রাতে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে লাশ দাফনও করা হয়। জেলা প্রশাসনের অনুমতিক্রমে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বিকালে সেই লাশ কবর থেকে তুলে কিশোরগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়ার বাগুড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

রুবেল হোসেন (২২) শার্শার কায়বা ইউনিয়নের বাগুড়ী গ্রামের ফারুক হোসেনের ছেলে। গত ৩ জুলাই বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান রুবেল। মোজাম্মেল হক কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার জবদল গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে। গত ১৭ জুলাই সৌদি আরবের রিয়াদ শহরে এক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়।

রুবেলের বাবা ফারুক হোসেন বলেন, ‘এক বছর আগে একটি স্কুলের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবের রিয়াদ শহরে গিয়েছিল রুবেল। গত ৩ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। গতকাল বুধবার দুপুরে তার লাশ দেশে আসে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লাশ গ্রহণ করি।’

তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরে কফিনের গায়ে রুবেলের নাম ও পাসপোর্ট নম্বর লেখা ছিল। ওই দিন বিকালে কফিন নিয়ে বাড়িতে পৌঁছানোর পর খুলে দেখি, এটি রুবেলের লাশ নয়। তখন বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানকে জানাই। এ অবস্থায় তারা বলেন, লাশ ফুলে বিকৃত হয়ে গেছে। দ্রুত দাফন সম্পন্ন করেন। উপায় না পেয়ে সন্ধ্যায় জানাজা শেষে সরকারি কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।’

এদিকে, বৃহস্পতিবার মোজাম্মেলের স্বজনরা জানতে পারেন, সৌদি থেকে ভুলক্রমে তার লাশ রুবেলের ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। এ খবর পেয়ে মোজাম্মেলের স্বজনরা লাশ নিতে ছুটে আসেন রুবেলের বাড়িতে। 

মোজাম্মেলের স্বজনরা জানান, রুবেলের লাশ দেশে আসেনি। সৌদির হিমঘর থেকে লাশ বদল হয়েছে বলে সৌদি থেকে মোজাম্মেলের সহকর্মীরা জানিয়েছেন। ফলে রুবেলের কফিনে মোজাম্মেলের লাশ এসেছে শার্শার বাড়িতে।

জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে বাগআঁচড়া সরকারি কবরস্থান থেকে লাশটি উত্তোলনের পর মোজাম্মেলের বলে শনাক্ত করা হয়

মোজাম্মেল হকের ভাতিজা নাহিদ হাসান জিকো বলেন, ‘সৌদির হিমঘর থেকে লাশটি বদল হয়েছে। আমার চাচা মোজাম্মেল হক গত ১৭ জুলাই সৌদি আরবের রিয়াদ শহরে মারা যান। সে দেশের কর্তৃপক্ষ ভুলক্রমে লাশটি যশোরে পাঠিয়ে দিয়েছে। তবে রুবেলের লাশ এখনও দেশে আসেনি।’

এ অবস্থায় মোজাম্মেলের স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিকালে যশোর জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে বাগআঁচড়া সরকারি কবরস্থান থেকে লাশটি উত্তোলনের পর মোজাম্মেলের বলে শনাক্ত করা হয়। লাশটি শনাক্ত করেন মোজাম্মেলের শ্যালক জবডল গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে ইনামুল হক।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কায়বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মোজাম্মেল হকের লাশটি তুলে স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে রুবেলের লাশ যাতে দেশে দ্রুত পৌঁছায়, স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সে আবেদন করা হয়েছে।’

যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘মোজাম্মেলের স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিকালে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হয়। স্বজনরা শনাক্তের পর স্থানীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেনের মাধ্যমে লাশটি হস্তান্তর করা হয়।’