পানি বাড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ, অরক্ষিত উপকূল

বর্ষা শুরু হলেই প্রতি বছর খুলনার কয়রা উপজেলায় বেড়িবাঁধে ভাঙন ধরে। সেইসঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। নষ্ট হয় ঘরবাড়ি ও ফসল। চলতি বর্ষায় পানি বেড়ে যাওয়ায় কয়রার শাকবাড়িয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের প্রায় ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে আছেন পাঁচ ইউনিয়নের বাসিন্দারা। পাশাপাশি উপকূলের বেড়িবাঁধের কয়েকটি পয়েন্ট ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এরই মধ্যে পানখালী ও তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কয়েক স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ঝপঝপিয়া নদীর তীরে পানখালী ইউনিয়নের জাবেরের খেয়াঘাট সংলগ্ন বেড়িবাঁধ, লক্ষ্মীখোলা এলাকার রাস্তার মাথা ও তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের ভদ্রা নদীর তীরে বটবুনিয়া বাজার সংলগ্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। যেকোনো সময় রাস্তা ভেঙে পানি প্রবেশ করলে হাজার হাজার বিঘা জমির আমন ধানের বীজতলা নষ্ট হবে।

পানখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ সাব্বির আহম্মেদ ও তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী জালাল উদ্দীন জানান, বিষয়টি দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, ‘খবর পেয়ে ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তারা বলেছেন দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।’

এদিকে, দাকোপ উপজেলার চুনকুড়ি, পশুর ও ঢাকীসহ বিভিন্ন নদী ও খালের পানি বেড়েছে। পোদ্দারগঞ্জ ঘাটের রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এ ছাড়া চর এলাকায় বসবাসকারীদের বাড়িঘরে পানি উঠেছে। মঙ্গলবার পানি বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকালে পোদ্দারগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকার চুনকুড়ি, পশুর নদীর তীরে থাকা ঘাট এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কারও কারও ঘরে পানি ঢুকেছে। রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে অনেকের। 

পোদ্দারগঞ্জ ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা স্বপন রায় বলেন, ‘পানিবন্দি অবস্থায় আছি। খুব কষ্টে থাকতে হচ্ছে আমাদের। রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। গবাদিপশু নিয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছি আমরা।’

চালনা পৌর এলাকার বাসিন্দা সুবল ঘোষ বলেন, ‘চারপাশে নদী আর খালের পানি। মাঝে বাজুয়া, দাকোপ, কৈলাশগঞ্জ, বানিশান্তা, লাউডোবসহ ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা। ভোগান্তি বেড়ে গেছে সবার।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, তীব্র ভাঙনে সিসি ব্লক সরে গিয়ে হুমকির মুখে পড়েছে উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কাটকাটা এলাকার শাকবাড়িয়া নদীর বাঁধ। উত্তর বেদকাশী থেকে দক্ষিণ বেদকাশী পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার বাঁধের ঢালে মাটি ধসে জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও দুই পাশের মাটি সরে বাঁধ সরু হয়ে গেছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ঢুকছে আশপাশের গ্রামগুলোতে।

জনপ্রতিনিধি ও পাউবোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলার ৬ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রা রিং বাঁধ, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট–সংলগ্ন এলাকা, মঠবাড়িয়া, ২ নম্বর কয়রা, হোগলা, গাজীপাড়া, গোলখালী, হাজতখালী, জোড়শিং ও মহেশপুর এলাকার প্রায় ১২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীতে পানি বাড়লে ওই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকবে। এ ছাড়া কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীতে পানি সরবরাহের আটটি জলকপাট (স্লুইসগেট) অকেজো পড়ে আছে। শাকবাড়িয়া নদীর নয়ানী ও সুতিয়া বাজার-সংলগ্ন জলকপাটটি নষ্ট হওয়ার উপক্রম। জলকপাটের দুই পাশের মাটি দেবে গিয়ে নদী থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকছে।

পাউবোর খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘নদীতে জোয়ারের চাপ বাড়লে উপজেলার কোথাও না কোথাও ভাঙন ধরে। আমরা স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করছি। আপাতত বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশের তালিকা করা হয়েছে। কিছু এলাকায় সংস্কার চলছে। যেখানে ভাঙন ধরবে, তা দ্রুত সংস্কার করা হবে।’