শিক্ষার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী: কাজী নাবিল

যশোরে ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেছেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন শিক্ষার ওপরে। তিনি তার সন্তান মাননীয় আইটি বিশেষজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ, যিনি সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তাদের বলেছেন, তোমাদের কোনও কিছুই দিতে পারবো না, কেবল শিক্ষা দিয়ে গেলাম।’

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে তিনি জিলা স্কুল অডিটোরিয়ামে ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদযাপন কমিটি আয়োজিত ৮ম বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড এবং ৮ম বিজ্ঞানবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে এসব কথা বলেন।

অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে কাজী নাবিল বলেন, ‘তোমাদের মতো আমিও একসময় ছোট ছিলাম। স্কুলজীবনে আমিও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি দিবসে প্রজেক্ট করেছি। বিজ্ঞান মেলার মাধ্যমে তোমরা নিজেরা প্রজেক্ট করবে, সহপাঠী বন্ধুদেরও বিভিন্ন প্রজেক্ট দেখবে। তাহলেই তোমরা বিজ্ঞানের সঙ্গে সহজভাবে মিশতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি চাই তোমাদের বিজ্ঞান মেলা সফল হোক। শিক্ষার্থীদের সাবলীল করতেই বিজ্ঞান মেলা। কুইজ প্রতিযোগিতার মতো অনুষ্ঠান করা খুবই জরুরি। এতে শিক্ষার্থীদের আস্থা বৃদ্ধি পায়, তারা ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে সুন্দরভাবে প্রবেশ করতে পারবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলা ট্রিবিউনের প্রকাশক ড. আনিস আহমেদ

দেশের আমূল পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে কাজী নাবিল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা বিশ্ব দরবারে একটি উঁচু অবস্থানে রয়েছি। ২০০৯ সালে দেশের দায়িত্ব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন ডিজিটাল বাংলাদেশ আর মধ্যম আয়ের দেশের। ইতোমধ্যে আমরা তা বাস্তবায়ন করেতে পেরেছি। একের পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে পৃথিবীতে ৩৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। দেশের প্রবৃদ্ধি যা আছে তা বজায় থাকলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এ দেশ ২৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিণত হবে। ২০০৯ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৬০০ মার্কিন ডলার, বর্তমানে তা ২৮০০ মার্কিন ডলার। ওই সময় জিডিপি ছিল ৬০ মিলিয়ন ডলার, এখন ৪৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বাংলা ট্রিবিউনের প্রকাশক ড. আনিস আহমেদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা যারা এখানে এসেছো তারা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সফলকাম হয়েছো। দেশের ভবিষ্যৎ সুনাগরিক হতে এই চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তোমরা মেধাবী, তাই তোমাদের কাছে আশাও অনেক বেশি। তোমরা ইতোমধ্যে অনেক কিছুই পূরণ করেছো। তবে তোমাদের সামনে লম্বা একটা পথ রয়েছে। সেই পথ হচ্ছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভবিষ্যৎ পথ। সেই পথে যেতে হলে একটু সচেতন হতে হবে।‘

১৯৮৮ সালে আমেরিকার নামকরা ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে তাদের (কাজী আনিস আহমেদ) উদ্দেশে দেওয়া সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের দুটি বাণী স্মরণ করেন। কাজী আনিস বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশে স্বাগত বক্তৃতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, আমরা যা জানি না, সেটি আমাদের শিখতে হবে। কিন্তু এমনও জিনিস আছে, যা আমি জানিও না যে সেটি আমি জানি না। সেটা যে অনুসন্ধান করতে পারবে, বের করতে চেষ্টা করে বের করবে; সে সবার থেকে আরও বেশি এগিয়ে যাবে। আরেকটি কথা তিনি বলেছিলেন, তোমরা এখন যেসব সাবজেক্ট পড়ছো, আজ থেকে ২০, ৩০ বা ৪০ বছর পর তার তেমন কোনও সম্পর্ক থাকবে না। এমন সব সাবজেক্ট আবির্ভূত হবে যেগুলোর এখন কোনও অস্তিত্ব নেই।’

বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি

‘উনি যখন এসব কথা বলেছিলেন, তখন কিন্তু এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স), ন্যানো টেকনোলজি বা বায়োটেকনোলজি সে রকম কিছু ছিল না। এরপর আরও কী কী যে আসবে, আমরা তা জানি না।’

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আরও বলেন, ‘তোমাদের শুধু বিজ্ঞানমনষ্ক হলেই হবে না। সত্যিকার অর্থে অনুসন্ধিৎসু হতে হবে। এবং তোমরা যাতে সেটি হও, সেই আশীর্বাদ রইলো।’

যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রিপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল, যশোর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোয়াইব হোসেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথিসহ অন্য অতিথিরা বিজ্ঞান মেলায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রজেক্ট দেখেন।