বিএনপি নেতার আড়তে যুবকের লাশ, মারধর করে হত্যার অভিযোগ

যশোরে এস এম বায়েজিদ হাসান (৩২) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (২৫ মার্চ) রাত ৩টার দিকে কোতোয়ালি থানার অদূরে যশোর নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে মুল্লুক চাঁদের চালের আড়ত থেকে ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, পাওনা টাকা উদ্ধারে মারধর করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ।

নিহত বায়েজিদ হাসান খুলনা সিটি করপোরেশনের হাজী ইসমাইল রিং রোড সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি বিএনপি নেতা মল্লুক চাঁদের ঢাকা অফিসের কর্মী ছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, নৈশ প্রহরীদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে রাত ৩টার দিকে মল্লুক চাঁদের বাড়ি সংলগ্ন চালের আড়তে যায় পুলিশ। সেখান থেকে লাশ উদ্ধার করে। পরে জানা যায়, ওই যুবকের নাম বায়েজিদ। তিনি পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং মল্লুক চাঁদের ঢাকা অফিসে কর্মরত ছিলেন।

তার মায়ের বরাত দিয়ে পুলিশ আরও জানায়, বায়েজিদের কাছে পাঁচ লাখ ৫৪ হাজার টাকা পেত তার প্রতিষ্ঠান। ওই টাকার জন্য রবিবার তাকে খুলনায় থেকে ডেকে আনা হয়। এরপর টাকা আদায়ের জন্য তাকে মারধর করা হয়। চিকিৎসা না দিয়ে তাকে চালের আড়তে ফেলে রাখা হয়েছিল। যাতে তার মৃত্যু হয়। তার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

আড়তের নৈশপ্রহরী মোজহার হোসেন জানান, তিনি রাত ১০টার দিকে আড়তে আসেন। এ সময় ওই ছেলেটিকে আড়তের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। লেবারদের কাছে জানতে চাইলে জানান, তাকে মারধর করা হয়েছে। ঠিক হয়ে গেলে চলে যাবে। এরপর লেবাররা যে যার মতো বাড়ি চলে যান। পরে তিনি বিষয়টি ম্যানেজারকে জানালে তিনিও একই কথা বলেন। এরপর তিনি আড়তে তালা দিয়ে বাইরে এসে অবস্থান নেন। পুলিশ গেলে তিনি দরজা খুলে দেন। এ সময় তারা ওই যুবককে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে এবং নিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, লেবারদের মধ্যে কানাঘুঁষা হচ্ছিল, ওই ছেলেকে আড়তের মালিকই মারধর করেছেন। এর বেশি তিনি কিছু জানেন না।

রাত চারটার দিকে পুলিশের কাছ থেকে জানতে পারেন ছেলে মারা গেছে জানান নিহত বায়েজিদের মা দিলরুবা বেগম। তিনি বলেন, রবিবার দুপুর ১টার দিকে মুল্লুক চাঁদের কর্মচারী রাজু, রাজন, শহিদুলসহ ৫-৬ জন তাকে খুলনার বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। তারা খুলনা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর বিপ্লবের কাছে তাকে নিয়ে যাচ্ছে বলে জানায়। ছেলের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, যশোরের কেশবপুরে তারা ইফতার করেছে। সেই সময় ছেলে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে। রাত ১২টার দিকে ছেলে ফোনে জানায়, তারা তাকে আর বাঁচতে দেবে না ।

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান। তিনি বলেন, পাওনা টাকা নিয়ে একটি বিরোধের তথ্য পেয়েছি। তবে কী কারণে এবং কে কে এ হত্যায় জড়িত তা শনাক্তে তদন্ত চলছে। দ্রুত হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও আটক করা সম্ভব হবে।

এদিকে যশোর নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, ওই যুবক তার ঢাকা অফিসে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতো। সাব-কন্ট্রাক্টরের মালামাল কেনার পাঁচ লাখ ৫৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায়। ওই টাকার জন্য খুলনা সিটি করপোরশেনের একজন কাউন্সিলরের মাধ্যমে দেন দরবার চলছিল। তাকে কে ডেকে এনেছে বা কে মারধর করেছে, তিনি কিছুই বলতে পারছেন না। তার কর্মীদের সবার ফোন বন্ধ। তিনি বিষয়টি জানার চেষ্টা করছেন।