‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু

চুয়াডাঙ্গা ও পাবনায় ‘তীব্র গরমে’ দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বজনরা। শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে দামুড়হুদা উপজেলায় কৃষিজমিতে কাজ করার সময় আমির হোসেন ও দুপুরে পাবনার রূপকথা রোডে দোকানে চা পানের সময় সুকুমার দাস অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তবে তারা ‘হিটস্ট্রোকে’ মারা গেছেন কিনা তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি চিকিৎসকরা।

জাকির হোসেন (৩৩) দামুড়হুদা উপজেলার ঠাকুরপুর গ্রামের আমির হোসেন ছেলে। তিনি ঠাকুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দফতরি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সুকুমার দাস (৬০) পাবনা শহরের শালগাড়িয়া এলাকার জাকিরের মোড়ের বাসিন্দা। 

স্বজনরা জানিয়েছেন, সকালে ধানের ক্ষেতে সেচ দিতে যান জাকির হোসেন। ঘণ্টাখানেক মাঠে থাকার পর স্বজনরা খবর পান তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরে মাঠের অন্য কৃষকদের সহায়তায় উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হেলেনা আক্তার নিপা বলেন, ‘জাকির হোসেনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে স্বজনরা জানান হিটস্ট্রোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখানে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে। আমাদের ধারণা, তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। তবে এটি হিটস্ট্রোক কিনা, তা নিশ্চিত হতে পারিনি।’ 

স্থানীয় সূত্র ও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, চুয়াডাঙ্গায় টানা এক সপ্তাহ ধরে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শনিবার বিকাল ৩টায় জেলায় সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুমের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় সাধারণ মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। এরই মধ্যে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় হিট অ্যালার্ট জারি করেছে জেলা প্রশাসন। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। শহরে জেলা প্রশাসন ও তথ্য অফিসের সহযোগিতায় মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করা হচ্ছে।

মারা যাওয়া জাকির হোসেন

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গায় তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। এই কারণে হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এই সময়ে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করছি আমরা।’

এদিকে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পাবনা শহরের রূপকথা সড়কের একটি দোকানে চা পানের সময় সুকুমার দাস অসুস্থ হয়ে পড়েন। আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রফিকুল হাসান জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল লোকজন। এখানে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় আমরা ধারণা করছি, তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল। পরে তার স্বজনরা এসে লাশ নিয়ে গেছেন।’

সুকুমার হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমরা বলতে পারবো না। কারণ এখানে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। কীভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা ময়নাতদন্ত করে বলতে হবে।’

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে পাবনায় ৪০ ডিগ্রি বা এর বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা জেলায় চলতি মৌসুমের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে এত তাপমাত্রা রেকর্ড হয়নি। ঈশ্বরদীসহ আশপাশের এলাকাজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে। তাপমাত্রা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। পাশাপাশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। বেশি বেশি তরল খাবার খেতে হবে।

আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় ৪২ পেরোলো তাপমাত্রা, জনজীবনে হাঁসফাঁস