কুষ্টিয়ার তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

সূর্যের প্রখরতা ও তীব্র গরমে পুড়ছে কুষ্টিয়া। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকাল ৩টার দিকে জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে চলতি মাসের ২০ এপ্রিল একই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। চলতি মৌসুমে এটিই এই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় বুধবার ৪০ দশমিক ৮ডিগ্রি, মঙ্গলবার ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি, সোমবার ৪০ ডিগ্রি, রবিবার ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও শনিবার ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

কুষ্টিয়ায় টানা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলেছে তীব্র তাপপ্রবাহ। অব্যাহত তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষের জীবন।

স্থানীয়রা বলছেন, কালবৈশাখীর মৌসুমেও প্রায় এক মাস বৃষ্টির দেখা নেই। নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর শুকিয়ে গেছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পানি উঠছে না অগভীর নলকূপ ও সেচ পাম্পে। তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে। মাঠে রোদে পুড়ে কৃষকের ফসল নষ্ট হচ্ছে। পেটের দায়ে যারা কাজ করতে বের হচ্ছেন তারা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। শিশুরাসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

এদিকে, তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে এবং বৃষ্টির প্রত্যাশায় প্রায় প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন স্থানে ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় করা হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে মিরপুর পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড খন্দকবাড়িয়া গ্রামের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে এই নামাজ আদায় করা হয়। বিশেষ এই নামাজের ইমামতি করেন খন্দকবাড়িয়া কেন্দ্রীয়  জামে মসজিদের খতিব মাওলানা ফারুক হোসেন। নামাজ শেষে দোয়া মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে এবং বৃষ্টির প্রত্যাশায় সৃষ্টিকর্তার কাছে দুই হাত তুলে অঝোরে কাঁদেন মুসল্লিরা।

খন্দকবারিয়া ঈদগাহে নামাজ পড়তে আসা হযরত ওমর ফারুক (রা.) এতিমখানার পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং অনাবৃষ্টির কারণে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি। আল্লাহ যেন তার রহমতের বৃষ্টি দিয়ে দেশ এবং জাতিকে ঠান্ডা করে দেন। রাসুল (সা.) জীবনে একাধিকবার সাহাবিদের নিয়ে এই নামাজ পড়েছেন। আমরা আজকে খন্দকবাড়িয়া কেন্দ্রীয় ঈদগাহে এই নামাজ আদায় করেছি।

খন্দকবাড়িয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খুতিব মাওলানা ফারুক হোসেন, যখন অনাবৃষ্টি হয় এবং তাপপ্রবাহের কারণে মানুষ কষ্টের মধ্যে থাকে। তখন আল্লাহর নিকট বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য এই নামাজ পড়ার বিধান আছে। অনেক সময় দেখা গেছে সালাতুল ইসতিসকার দোয়ার কারণে আল্লাহ বৃষ্টি বর্ষণ করেন।

এদিকে, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গরমে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুর এবং বৃদ্ধরা।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার জানান, প্রচণ্ড গরমে জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা বেড়ে গেছে। এ জন্য গরমের সময় অসুস্থতা থেকে বাঁচতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

কুমারখালী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মামুন আর রশিদ বলেন, কুষ্টিয়ায় এ মৌসুমে টানা দ্বিতীয়বারের মতো জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে কুষ্টিয়া জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ২ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, আজকেসহ তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।