খুলনায় বিএনপি নেতা আজিজুল বারী হেলাল

নির্বাচন দিলে সমস্যার সমাধান হবে, ষড়যন্ত্রকারীরা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস তার বক্তব্যে অনেককে আশাহত করেছেন। আমরা আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা তার সমস্ত প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যা চিহ্নিত করে নির্বাচনের একটা রূপরেখা দেবেন। আমরা কেন বারবার নির্বাচনের কথা বলছি, কারণ নির্বাচন দিলে সমস্যার সমাধান হবে। বিএনপি ক্ষমতায় যায় বা না যায় সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু আজকে যারা ক্ষতি করবার চেষ্টা করছে, তারা তখন পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে। সংস্কারের জন্য এই সরকার অনেক কমিশন গঠন করেছে। তাদের প্রতি আমাদের এবং জনগণের আস্থা আছে। কিন্তু আমরা চাইবো, সেটা দ্রুত শেষ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক যে সংস্কারব্যবস্থা, সেটির মাধ্যমে আমরা আলোর দিকে এগিয়ে যাবো।’

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় তেরখাদা উপজেলার সাচিয়াদাহ ইউনিয়ন বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে তারেক রহমানের ৩১ দফার আলোকে সাম্য ও মানবিক সমাজ বিনির্মাণে সম্প্রীতির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল শুধু কোটাবিরোধী আন্দোলন। ফ্যাসিবাদের ভয়াল থাবায় যখন ছাত্রদের আন্দোলন প্রায় থমকে গিয়েছিল, ঠিক সেই মুহূর্তেই জাতির কাণ্ডারির ভূমিকায় আন্দোলনকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রূপ দিয়েছিলেন দেশনায়ক তারেক রহমান।’

তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ ফ্যাসিস্ট সরকার থেকে মুক্তি চেয়েছিল। তবে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের রক্তে ভেজা বিপ্লবকে সফল বলা যাবে না। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের মাধ্যমে আমাদের প্রথম ধাপের বিজয় হয়েছে। তবে পরিপূর্ণ বিজয় না আসা পর্যন্ত নেতাকর্মীদের সুসংগঠিতভাবে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের সতর্ক, সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

বিএনপিতে কোনও সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, গুন্ডা, মাস্তানের জায়গা হবে না উল্লেখ করে হেলাল বলেন, ‘রাষ্ট্রের ভালো-মন্দ রাজনীতিবিদরাই ভালো জানেন। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ সময়ক্ষেপণ না করে নির্বাচনের পথ তৈরি করুন। এবারের গণঅভ্যুত্থান শুধু রাজনীতিবিদদের জন্য ইতিহাস নয়, সবার জন্য শিক্ষা।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমাদের লড়াই। বাকস্বাধীনতার জন্য লড়াই। যে ছেলেদের আজ ২০-২২ বছর বয়স, তারা ভোট দিতে পারেনি। তারা ভোট দেওয়া জানে না। তারা আর কত সময় অপেক্ষা করবে? অন্তর্বর্তী সরকার হবে গণতন্ত্রের প্রতীক, গণতন্ত্রের মডেল। তা না করে এই যে প্রলম্বিত করা, আমার মনে হচ্ছে- কোথাও কোনও জটিলতা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বৈরাচার ফ্যাসিস্টদের প্রেতাত্মারা এখনও সমাজে ও রাষ্ট্রের গভীরে অবস্থান করছে। গত ১৬ বছরে পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার, মাফিয়া সরকার সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, লুটপাট করেছে। বিএনপি এসবে বিশ্বাস করে না।’ প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা চাঁদাবাজি করে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে তারা বিএনপির কেউ হতে পারে না। যারা সমাজে বিশৃঙ্খলা করবে তাদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিগত ১৭ বছর দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি, ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করতে পারিনি। ভোটের সংস্কৃতিকে জাদুঘরে পাঠিয়ে দিয়েছিল পতিত মাফিয়া সরকার। ১৭ বছর বিনা ভোটের নির্বাচন, রাতের নির্বাচন, আমি-ডামির নির্বাচন, বিভিন্নভাবে ভোটব্যবস্থাকে কলুষিত করে বাংলাদেশে ভোটের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে হাসিনা সরকার। বাংলাদেশের মানুষ ভোট কী, তা ভুলে গেছে। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি রাজপথে ছিল। বিএনপির আন্দোলনের একপর্যায়ে যুক্ত হয়েছিলো ছাত্র-জনতা। আর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।’

আজিজুল বারী হেলাল বলেন, জনগণের ১৭ বছরের দাবি, ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচিত করা। কিন্তু অর্ন্তবর্তী সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে আসে কিছু ষড়যন্ত্রকারী। আবারও আমাদের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ৩১ দফা সুপারিশ দিয়েছি।’

সাচিয়াদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খান গিয়াস উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেছেন সাচিয়াদহ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এস এম আবুল বশার। সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, খুলনা জেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, খুলনা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবু হোসেন বাবু, খান জুলফিকার আলী জুলু, তেরখাদা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি চৌধুরী কওসর আলী, খুলনা জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইবাদুল হক রুবায়েত। বিশেষ বক্তা ছিলেন তেরখাদা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চৌধুরী ফখরুল ইসলাম বুলু, সদস্যসচিব এফ এম হাবিবুর রহমানসহ অনেকে।