সীমান্তে নিহত দুই বাংলাদেশির লাশ ফেরত দিচ্ছে না বিএসএফ

ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত দুই যুবকের লাশ ফেরত আনার বিষয়ে কোনও অগ্রগতি নেই। মাস পার হলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) লাশ ফেরত না দেওয়ায় নিহতদের পরিবারে চলছে গভীর শোক ও ক্ষোভ। পরিবারগুলোর দাবি, বিজিবির গাফিলতি ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাবেই লাশ দেশে আনা সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, গত ২৭ এপ্রিল রাতে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন গোপালপুর গ্রামের হানিফ আলীর ছেলে ওবাইদুর রহমান। ঢাকায় গাড়ি চালানো ওবাইদুর সেদিন রাতে কয়েক বন্ধুর সঙ্গে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন। ভারতের মধুপুর বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিলে অন্যরা পালিয়ে গেলেও ধরা পড়েন ওবাইদুর। কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা। পরে সীমান্তের ভারতীয় অংশে তার লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিএসএফ লাশ নিয়ে যায়, কিন্তু এতদিনেও তা ফেরত দেওয়া হয়নি।

মা নাসিমা খাতুন বলেন, ছেলের লাশ ফিরে পেলে তাকে দাফন করে অন্তত মনকে বোঝাতে পারতাম যে সে আমার কাছেই আছে। বিজিবির কাছে বারবার গিয়েও কিছু হয়নি।

বাঘাডাঙ্গা গ্রামের ওয়াসিম ও আরও কয়েকজন গত ৬ এপ্রিল ভারতে প্রবেশ করেন। হাবাসপুর বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যদের ধাওয়া খেলে বাকিরা পালিয়ে গেলেও ওয়াসিম ধরা পড়েন। ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় ইছামতি নদীতে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেন বাংলাদেশি কৃষকরা। পরে স্থানীয়রা নিশ্চিত হন, লাশটি ওয়াসিমের এবং সেটি ভারতের অংশে অবস্থান করছে। বিএসএফ পরে লাশটি নিয়ে যায়। লাশ নদীতে ভেসে থাকতে দেখা গেছে।

ওয়াসিমের বড় ভাই মেহেদী হাসান বলেন, ছবিতে নিশ্চিত হওয়ার পর বিজিবিকে জানাই। তারা লিখিত অভিযোগ নিলেও কয়েকদিন পর বলেন, আমাদের পক্ষে মরদেহ আনা সম্ভব নয়।

মা ফিরোজা খাতুন বলেন, বিজিবি বলছে, পাসপোর্ট-ভিসা করে নিজেরাই ভারতে গিয়ে লাশ আনতে হবে। আমরা গরিব, মূর্খ মানুষ- এভাবে কীভাবে লাশ আনব?

লাশ ফেরত আনার বিষয়ে ৫৮ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল রফিকুল আলম বলেন, বিএসএফ জানিয়েছে, ওয়াসিমের লাশটি ভারতের পুলিশের কাছে আছে। তারা লাশের ময়নাতদন্ত করেছে। ভারতীয় পুলিশের ভাষ্যমতে, লাশ নিতে হলে বৈধভাবে ভারতীয় পুলিশের কাছে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে উপযুক্ত প্রমাণ ও শনাক্ত শেষে কলকাতার বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এনওসি নিতে হবে। পরে তাদেরকে ফরেনার রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসে গিয়ে যাবতীয় কার্যাদি সম্পন্ন করতে হবে। এই বিষয়গুলো ওই দুই পরিবারকে জানানো হয়েছে এবং স্থানীয় প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে যাতে তারা লাশ ফেরত আনতে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করে।

বিজিবির মাধ্যমে লাশ ফেরত আনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভারতীয় বিএসএফের সঙ্গে অনেকবার পতাকা বৈঠকসহ নানা চেষ্টা করেছি। কিন্তু লাভ হয়নি। বিএসএফ জানিয়েছে, বিষয়টা পুরোপুরি ভারতীয় পুলিশ হ্যান্ডেল করছে। তাদের কিছু করার নেই। সেই ক্ষেত্রে তারা বলেছে, পরিবারের পক্ষ থেকে বৈধ উপায়ে ভারতে এসে সকল কার্যাদি সম্পন্ন করে লাশ ফেরত নিতে হবে।

পরিবারগুলোর মতে, সীমান্তে হত্যা হলেও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে লাশ ফেরত আনার উদ্যোগ ছিল না বললেই চলে। সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হওয়া নতুন কিছু নয়, তবে লাশ ফেরত না পাওয়ার এই ঘটনা সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ভয়াবহ দুর্বলতাকেই তুলে ধরে। বিশেষ করে মাসব্যাপী সময় পেরিয়ে গেলেও লাশ দেশে না আসা ও প্রশাসনের নির্লিপ্ততা- সবমিলিয়ে এটি একটি চরম মানবিক সংকট।