লালমনিরহাটের আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার কয়েকটি সীমান্ত এলাকা দিয়ে নারী-শিশুসহ অন্তত ৬৫ জনকে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও স্থানীয় লোকজনের বাধায় তা করতে পারেনি বিএসএফ। ঠেলে পাঠানোর জন্য আনা লোকজন বর্তমানে কাঁটাতারের ওপারে ভারতীয় অংশের শূন্যরেখায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার (২৮ মে) ভোরে আদিতমারীর দুর্গাপুরের চওড়াটারী, হাতীবান্ধার ভেলাগুড়ির বনচৌকি; পাটগ্রামের ধবলগুড়িসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে তাদের ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় সীমান্তগুলোতে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে দুপুরে বিজিবি ও বিএসএফের ক্যাম্প কমান্ডার পর্যায়ে এবং বিকালে অধিনায়ক পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বিজিবি ও সীমান্তের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার ভোররাত থেকে আদিতমারীর দুর্গাপুরের চওড়াটারী সীমান্ত দিয়ে ১৩ জন, হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়া ইউনিয়নের বুড়া সারডুবী সীমান্তে ১৬ জন, গোতামারী সীমান্তে ছয় জন, সিন্দুর্না ইউনিয়নে দুজন, পাটগ্রাম উপজেলার জগৎবেড় ইউনিয়নে ১৫ জন, জোংড়া ইউনিয়নের ধবলগুড়ি সীমান্তে পাঁচ জন, বাউড়া ইউনিয়নের সীমান্তে আট জনকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা করে বিএসএফ। তবে বিজিবির বাধায় ওই ব্যক্তিরা বাংলাদেশে ঢুকতে পারেননি। ঘটনার পর থেকে সীমান্তে সতর্ক অবস্থান নেয় বিজিবি। এতে ঠেলে পাঠানো লোকজন শূন্যরেখায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিতে বাধ্য হন। এদিকে বিভিন্ন সীমান্তে ঠেলে পাঠানোর খবর পেয়ে সীমান্তে বিজিবির পাশাপাশি স্থানীয় গ্রামবাসীও অবস্থান নেন।
বিজিবি জানায়, কাঁটাতারের বেড়ার গেট খুলে এপারে পাঠানো লোকজন ভারতের আসামের বাসিন্দা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়। দুপুরে আদিতমারীর দুর্গাপুরের চওড়াটারী গ্রামের ৯২৪ মেইন পিলারের ৯ এস পিলারের কাছে বিজিবির দুর্গাপুর বিওপি ক্যাম্পের কমান্ডার ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার পদ্মা ৭৮ বিএসএফ ক্যাম্পের কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর একই স্থানে বিকাল ৩টার দিকে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও ৭৮ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, পতাকা বৈঠকে বিএসএফের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সীমান্তে অবস্থান করা ব্যক্তিরা বাংলাদেশি নাগরিক। তখন বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, উপযুক্ত তথ্য-উপাত্ত ও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ ছাড়া তারা কাউকে বাংলাদেশে পুশ ইন করতে দিতে পারেন না। বিএসএফের পক্ষ থেকে বিষয়টি সুরাহা করতে কয়েক ঘণ্টা সময় চাওয়া হয়েছে। আমাদের প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত মতে, তারা সবাই আসামের বাংলাভাষী মুসলমান।’