ভারী বর্ষণে খুলনার পাইকগাছার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে মাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্ষার পানিতে ডুবে গেছে তিন হাজার ৭৫৫ মৎস্য ঘের ও পুকুর। বেড়েছে জনদুর্ভোগ। উপজেলা কৃষি অফিস ও আদালত চত্বরসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দফতর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে পাইকগাছার বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
এ বছর আষাঢ় মাসের প্রথম থেকে একটানা গুঁড়ি গুঁড়ি, হালকা ও ভারী বৃষ্টি লেগে আছে। এতে পুকুর, ঘের ও বসতবাড়ি তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পাইকগাছার গদাইপুর, হরিঢালী, কপিলমুনি ও রাড়ুলী উঁচু এলাকা হলেও বাকি ছয়টি ইউনিয়ন নিচু এলাকায় অবস্থিত। সামান্য বৃষ্টি হলে এসব এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। তবে গত দিনের ভারী বর্ষণে উঁচু এলাকাও পানিতে তলিয়ে গেছে। পৌর বাজারের সোনা পট্টি, মাছ বাজারসহ বিভিন্ন রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামীণ রাস্তা পানিতে তলিয়ে থাকে। বাড়ির উঠান পানিতে তলিয়ে থাকায় সাধারণ মানুষ বিড়ম্বনায় পড়েছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে শ্রমজীবী মানুষরা কাজে যেতে না পারায় কর্মহীন হয়ে পড়ে আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়ন গদাইপুরের কয়েকশ নার্সারি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবজি ক্ষেত ও আমন ধান ঝোড়ো হাওয়ায় পড়ে পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েক দিনের একটানা বৃষ্টিতে মানুষের জনদুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।
গদাইপুর ইউনিয়নের কৃষক সামাদ গাজী জানান, ভারী বৃষ্টিতে নার্সারি, সবজি ও ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। তার কুল, পেয়ারা ও লেবুর প্রায় তিন হাজার ছোট চারা পানির নিচে তলিয়ে আছে। বাড়ির উঠান পর্যন্ত তালিয়ে রয়েছে।
উপজেলার অনেকেরই একই অভিযোগ, পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশনের ড্রেন ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি বের হতে পারছে না। তাছাড়া ব্যক্তি স্বার্থে কিছু মানুষ তার বাড়ির সামনের বা পাশের ড্রেনটি বন্ধ করে রাখায় বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পানি ঠিকমতো বের হতে পারছে না। এতে করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
পাইকগাছা মেইন সড়কের গোলাবাটি, সলুয়া, নতুন বাজার ও জিরো পয়েন্ট এলাকার ভাঙা রাস্তা আরও ভেঙে ছোট ছোট ডোবায় পরিণত হয়েছে। যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ একরামুল হোসেন জানান, কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে এলাকা প্লাবিত হয়ে আমন ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। আমাদের উপসহকারী কর্মকর্তারা ইউনিয়নে কাজ করছেন। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই প্লাবিত এলাকার পানি সরে গেলে আমন ধানের চারার তেমন ক্ষতি হবে না।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার সৈকত মল্লিক বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৯০০ পুকুর ও ২৮৫৫ ছোট বড় ঘের তলিয়ে গেছে। যদি আবার এখন ভারী বৃষ্টি না হয় তাহলে অতি দ্রুত পানি কমে যাবে। নাহলে কোটি টাকার মাছ চলে যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন বলেন, ভারী বর্ষণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানি নিঃস্কাশনের জন্য নদীর স্লুইস গেটগুলো উন্মুক্ত রাখাসহ বিভিন্ন পানি নিঃস্কাশনের ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার জন্য টিমগুলো কাজ করছে।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামান বলেন, বৃষ্টিতে পাইকগাছা উপজেলায় ১৭৫ হেক্টর জমির পুকুর ও ঘের তলিয়ে চার কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া জেলার আর কোনও এলাকায় ক্ষতি নেই।