ঘরে ও বাইরে উঠেছে কোমর সমান পানি। এর মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা কামরুন নাহারকে (২৩) নিতে হবে হাসপাতালে। আশপাশে কোনও যানবাহন নেই। শেষ পর্যন্ত কলাগাছের ভেলায় ওই অন্তঃসত্ত্বাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন স্বজনরা।
বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে ভেলাটি যখন বুকসমান পানি মাড়িয়ে ফুলগাজী উপজেলা বাজারের সামনে পৌঁছে। এরপর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ফেনী থেকে আসা এক সাংবাদিক একটি পিকআপ ভাড়া করে তাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
ফেনীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গতকাল সন্ধ্যায় কন্যাসন্তানের জন্ম দেন কামরুন নাহার। তার স্বামী মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, অস্ত্রোপচার ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে সন্তানের জন্ম হয়েছে। নবজাতক ও মা দুজনেই সুস্থ আছেন।
তিনি বলেন, স্ত্রীর প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ছিল আগস্টের প্রথম সপ্তাহে। তাই তাকে ফুলগাজী উপজেলার পূর্ব ঘনিয়ামোড়া গ্রামে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে তিনি নিজে কর্মস্থল রাঙামাটিতে চলে যান। মঙ্গলবার রাত থেকে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করলে রাঙামাটি থেকে স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না।
তিনি আরও বলেন, একপর্যায়ে স্ত্রীর প্রসবব্যথা ওঠে। তখন তার শাশুড়ি ও চাচিশাশুড়ি কলাগাছের ভেলায় করে তাকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা দেন। প্রথমে ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলেও সেখান থেকে তাকে সরাসরি ফেনীর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুপুর দেড়টার দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স রত্না রানী বসাক বলেন, কামরুন নাহার স্বাভাবিকভাবে কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। নবজাতক ও মা উভয়েই সুস্থ আছেন, তবে রাতের দিকে মায়ের বুকের দুধ না পাওয়ায় শিশুটিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
পানি থেকে ভেলায় তুলে হাসপাতালে পাঠানোর সময় সহযোগিতা করা স্বেচ্ছাসেবক ও গণমাধ্যমকর্মী ইয়াসিন আরাফাত বলেন, মোবাইল ফোনে বন্যার ভিডিও ধারণ করার সময় দেখতে পান, দুজন বয়স্ক নারী এক প্রসূতিকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। তিনি দ্রুত নিজের মোটরসাইকেলে গিয়ে একটি পিকআপ ভাড়া করেন। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে প্রসূতি তখন একটি দোকানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো।
ফেনীর সিভিল সার্জন মোহাম্মাদ রুবাইয়াত বিন করিম বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব উপজেলা পর্যায়ে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বন্যা চলাকালীন ও পরবর্তী সময়েও এসব টিম কাজ করে যাবে।