নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে কৃষি ভর্তুকিতে অনিয়মের অভিযোগ

krishi-2নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে কৃষি ভর্তুকিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত কৃষকদের ভর্তুকি না দিয়ে উৎকোচের মাধ্যমে নিজেদের আত্বীয়-স্বজনদের কৃষি কার্ড দেওয়াসহ বোরো ধানের কৃত্রিম বীজ সংকটের কারণে সময়মত বীজ বপন করতে পারছেন না প্রান্তিক চাষিরা। এছাড়াও সরকার নির্ধারিত ডিলারের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চড়া দামে বীজ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি স্বীকার করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস স্থানীয় প্রশাসনের।
গত বছরের বোরো মৌসুমে আগাম বন্যায় নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার ফসলের শতভাগ ফসল তলিয়ে যায়। যে কারণে এসব অঞ্চলের কৃষকরা বোরো ধান ঘরে তুলতে পারেননি। ফলে এসব পরিবারে একদিকে চরম খাদ্য সংকট অন্যদিকে কৃষি উপকরণ কিনতে অর্থের যোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থানীয় চাষীদের। তবুও নতুন আশায় আগামী বোরো ফসলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
আগাম বন্যায় বছরের একমাত্র ফসলহানির পর এ ক্ষতিগ্রস্ত হাওরের মানুষকে দেখতে চলতি বছরের ১৮ই মে খালিয়াজুরীতে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ রকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। সে সময়ে সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী এই উপজেলার ১৯ হাজার কৃষককে প্রান্তিক কৃষক ঘোষণা করে তাদের কৃষি ভর্তুকির উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের জন্য প্রান্তিক চাষিরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর এর সুযোগ নিয়ে টাকার বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে ভর্তুকির কার্ড ।krishi
জগন্নাথপুর এলাকার কৃষক সুলেমান মিয়া বলেন, ‘৮ আড়া জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছিলাম, কিন্তু বন্যার কারণে এক মুঠো ধানও ঘরে তুলতে পারিনি। সহায় সম্বল হারিয়ে এখন নৌকা চলিয়ে দৈনিক ১০০-২০০ টাকা আয় করি। এভাবে সংসার চলে না। সরকারি সহযোগী এলাকায় আসলেও কোনও ত্রাণের কার্ড পাইনি। সরকার থেকে কৃষি ভুর্তুকির যে কার্ড দেওয়া হয়েছে তা প্রান্তিক কৃষকরা পায়নি।’
একই এলাকার বাসিন্দা যতীন্দ্র সরকার বলেন, ‘ঋণ করে টাকা এনে ধান কিনে চারা লাগানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু বার বার চেষ্টা করেও মেম্বারদেও কাছ থেকে কার্ড নিতে পারিনি। তারা শুধু তাদের নিজেদের লোকদের কার্ড বিতরণ করেছে।’
নেত্রকোনা জেলা সার বীজ মনিটরিং কমিটির সদস্য জেলা কৃষকলীগের সভাপতি কেশব রঞ্জন সরকার বলেন, ‘আমি জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কৃষকদের কাছ থেকে জেনেছি ডিলাররা অতিরিক্ত দামে বীজ বিক্রি করছে এবং তা হচ্ছে জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক বিলাশ চন্দ্র পালের সহযোগিতায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে বার বার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোনও সুফল পাইনি।’
খালিয়াজুরী উপজেলার মেন্দিপুর এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রণোদনার যে সার আমাদের দেওয়া হচ্ছে তা নিন্মমানের, তা দিয়ে কোনওভাবেই সঠিক উপকার পাওয়া সম্ভব না।’ তিনি এই এলাকার মানুষের পাশে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহায়তা কামনা করেন।krishi-3
এদিকে খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নের সার-বীজ ডিলার এবং ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির বিরুদ্ধে কৃত্রিম বীজ সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত দামে বীজ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রশাসন দাঁড়িয়ে থেকে বীজ বিক্রি করেছেন অনিয়ম ঠেকাতে। তবে এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেন সীলা বীজ ডিলার সচীন্দ্র সরকার।
খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি অফিসে কৃষি ভর্তুকি নিতে আসা ফখরুল ইসলাম জানান, এই সার দিয়ে পানি পড়ে। এই সার ভালো না বার বার বললেও কৃষি কর্মকর্তারা তা শুনছেন না। সার নিম্নমানের ও তা মেয়াদ উর্ত্তীণ এমন অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, সারের মান নিয়ে কোনও ভয় নেই, মান ভালো আছে।
কালো বাজারের বীজ বিক্রি অভিযোগ রয়েছে স্বীকার করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ তোফায়েল আহমদের। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বস্তবায়নে কোনও অনিয়ম সহ্য করা হবে না। এবং সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’