শারীরিক প্রতিবন্ধী হৃদয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চায়

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যে কখনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, তার অনন্য উদাহারণ নেত্রকোনার শিক্ষার্থী হৃদয় সরকার। মায়ের কোলে চড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। পড়াশোনা শেষ করে দেশের সেবায় কাজ করার জন্য সবার সহযোগিতা চান মেধাবী এই শিক্ষার্থী। দেশের হাজার হাজার সুস্থ-সবল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে তিনি ৩৭৪৪তম হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। মায়ের কোলে চড়ে তার পরীক্ষা দিতে যাওয়ার ছবিটি ভাইরাল হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বাংলাট্রিবিউনের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে হৃদয় জানিয়েছেন, পড়াশোনা শেষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে চান। তার এখন লক্ষ্য, কাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলোর একটিতে ভর্তি হওয়া।Netrakona protybondy student hridoy (5)

জীবনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তার সফলতার পেছনে তার মায়ের অবদানের কথা তুলে ধরে হৃদয় বলেন, ‘আমি একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি কিন্তু তবুও আমার মা আমাকে অন্য কোনও কাজে লাগাননি। আমাকে পরিবারের অন্য সন্তানদের মতোই লালন-পালন করেছেন। সেই শৈশব থেকে আজ অবধি স্কুলে কোলে করে নিয়ে গেছেন যাতে আমি পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারি। মায়ে অনুপ্রেরণাতেই আমি এখন বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখি।’

নেত্রকোনা শহরের কুরপাড় এলাকার সমীরণ সরকারের বড় ছেলে হৃদয় সরকার। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে শিশুকাল থেকেই তাকে চলাফেরা করতে হয় মায়ের কোলে চড়ে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠি ভর্তি পরীক্ষায় তিনি যে মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন তা শুনে এলাকার সাধারণ মানুষও খুব খুশি। শহরের কুরপার এলাকার বাসিন্দা রাসেল আহমেদ বললেন, ‘প্রতিবন্ধী হওয়ার পরেও হৃদয় সাফল্য পেয়েছেন তা অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের পরিবারকেও উৎসাহিত করবে। তাই আমাদের মনে এই ধারণা পোষণ করা উচিত যে প্রতিবন্ধীরা সমাজ বা পরিবারের বোঝা নয়।’

নেত্রকোনা আঞ্জুমান আর্দশ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘৬ষ্ঠ শ্রেণিতে তার ভর্তির পর থেকেই হৃদয়কে অনেক মেধাবি বলে মনে হতো। পড়াশোনার প্রতি ওর ব্যাপক আগ্রহ ছিল। ক্লাসের অন্য ১০ জন মেধাবীর চেয়েও সে ছিল অনেক বেশি ভালো।’ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাসু দেব সাহার ভাষ্য, ‘হৃদয় তিন তলায় উঠতে পারত না বলে আমি তাকে নিচতলায় ক্লাসের  ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। আমি তার এমন সফলতা দেখে আনন্দিত।’

হৃদয় নেত্রকোনা আঞ্জুমান আর্দশ সরকারি স্কুল থেকে ২০১৬ সালে  জিপিএ ৪.০৬ নিয়ে এসএসসি ও আবু আব্বাস ডিগ্রি কলেজ থেকে  ৪.৫০ জিপিএ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

হৃদয়ের মা সীমা রানী সরকার জানালেন, ‘স্বামী ইটভাটার ব্যবস্থাপক। টানাটানির সংসারে হৃদয়ের জন্ম হয় ২০০০ সালে। জন্ম থেকেই সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। তবু তাকে অবহেলা করিনি। তাকে নিয়েও স্বপ্ন দেখেছি। কষ্ট করেছি, তাই এখন হয়ত সফলতার দিকে যেতে পারব।’ তিনি প্রত্যাশা করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হৃদয়কে কাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলোর  কোনও একটিতে ভর্তির বিষয়ে সহায়তা করবে।

নেত্রকোনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আরিফুল ইসলাম বলেছেন, ‘তার পিতা-মাতা এমন এক সন্তানের জন্ম দিয়েছেন যাকে নিয়ে গর্ব করা যায়। তার ভর্তির সংক্রান্ত যেকোনও বিষয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে প্রশাসন।’