ময়মনসিংহ সদরের চরঈশ্বরদিয়া গ্রামের আসামুদ্দিনের স্ত্রী লিপি খাতুন (৪০), গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। করোনাভাইরাসের কারণে কাজ হারিয়ে গত এপ্রিলের শুরুতে গ্রামের বাড়ি ফিরে আসেন স্বামী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে। লিপি কোনও কাজ না পেয়ে একটি বেসরকারি এনজিও থেকে সুদে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে একটি মুদি দোকান দিয়ে বসেছেন। মুদি দোকানের বেচাকেনার আয় দিয়ে বেকার স্বামী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছেন তিনি।
লিপি খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'করোনাভাইরাসের কারণে কাজ হারিয়ে আমরা কয়েকশ’ গার্মেন্টসকর্মী বেকার হয়ে গ্রামের বাড়িতে বসে আছি। সুদে ঋণ নিয়ে ছোট একটি মুদি দোকান দিয়েছি। এতে যা আয় হয় তা থেকে এনজিও’র কিস্তি বাবদ সপ্তাহে এক হাজার ৭৫০ টাকা দেওয়ার পর হাতে যা থাকে তাই দিয়ে কোনোরকম সংসার চলছে। গ্রামের মানুষের হাতে নগদ টাকা না থাকায় দোকানের বেচাকেনাও কম। এছাড়া গ্রামের বাড়িতে দোকানে বাকিতে বেচাকেনা করতে হচ্ছে। এখন বাকিতে বিক্রি করা টাকা উঠাতে না পারায় প্রতি সপ্তাহে কিস্তির টাকাও দিতে পারছি না ঠিক মতো।'
লিপি খাতুন ও সাইফুলের মতো কাজ হারানো কয়েক হাজার পোশাক শ্রমিকের একই অবস্থা। পেশা বদলে একেক জন একেক কাজে নেমেছেন। অনেকে আবার বেকার হয়ে বসে আছেন। নিজের গ্রামের বাড়িতে তালিকায় নাম না থাকায় তারা সরকারি ত্রাণ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। এদের ত্রাণের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা।
ময়মনসিংহ সিপিবির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত জানান, সিপিবির তথ্য মতে, কাজ হারিয়ে প্রায় ৩ হাজার পোশাক শ্রমিক জেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন। এসব পোশাক শ্রমিকরা কাজ না পেয়ে নিজেদের পেশা বদলে একেক জন একেক ধরনের কাজে নেমেছেন। অনেকে আবার বেকার অবস্থায় গ্রামের বাড়িতে অর্থাভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। স্থানীয়ভাবে সরকারি ত্রাণের ব্যবস্থা করার দাবি করেন সিপিবির এই নেতা।
জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বেকার পোশাক শ্রমিকরা যে যেখানে অবস্থান করছেন, সেখানকার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তাদের নাম সরকারি ত্রাণের তালিকায় উঠবে। বেকার শ্রমিকদের ত্রাণ পাওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক।