মদনে অবাধে চলছে মা মাছ ও পোনা নিধন

মশারির জাল দিয়ে ধরা হচ্ছে মাছতলার হাওর ও বাওয়াইচবিল অধ্যুষিত নেত্রকোনার মদন উপজেলার নদী ও খাল-বিল এখন বর্ষার পানিতে টইটুম্বুর। বর্ষার পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে মৎস্য ভাণ্ডার খ্যাত দেশের অন্যতম এই হাওরে দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মা ও পোনা মাছ নিধনের মহোৎসব শুরু হয়েছে। নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, বাদাই জাল, খৈলশুনিসহ নানা উপকরণ দিয়ে অবাধে চলছে মা ও পোনা মাছ নিধন। হাট-বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে অবৈধভাবে ধরা এসব দেশীয় প্রজাতির মাছ। আর প্রতি বছরের মতো এবারও নিশ্চুপ মৎস্য বিভাগ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার কয়রা বিল, পাগলা বিল, বাওয়াইচ বিল, বরাঙ্গ বিল, চারিয়া বিল তলার হাওরের বিভিন্ন বিলসহ উন্মুক্ত জলাশয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, মশারি দিয়ে তৈরি নেট জাল, বেড় জাল, বাদাই জালসহ নানা উপকরণ দিয়ে মা মাছ ও পোনা মাছ নিধনে মেতে ওঠেছে এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য শিকারি। শৈল, টাকি, টেংরা, বাম, এমন কি মৎস অফিস থেকে উন্মুক্ত জলাশয়ে অবমুক্ত করা বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ধরতেও দ্বিধাবোধ করছেন না তারা। করোনাকালীন অলস সময় কাজে লাগিয়ে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মাছ শিকারের প্রবণতা আরও বেড়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ডিমওয়ালা ও পোনা মাছ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি টেংরা তিনশ থেকে চারশ, পুঁটি দুইশ, মোয়া মাছ দুইশ থেকে তিনশ, ডিমওয়ালা বোয়াল ছয়শ থেকে এক হাজার, শৈল বা টাকি মাছের পোনা দুইশ থেকে তিনশ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মদন পৌর সদরের বাসিন্দা সাইদুর রহমান ও আমির হামজার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মদন বাজারে বিভিন্ন গ্রাম থেকে নানান প্রজাতির মা ও পোনা মাছ ধরে নিয়ে আসা হচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় অনেক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে চাষ ব্যতীত দেশী মাছ পাওয়াও কঠিন হবে।

চলছে শিপ জাল দিয়ে মাছ নিধনগোবিন্দশ্রী গ্রামের আবুল খায়ের কাবিল, রুবেল আহম্মেদ, শেখ ফরিদ ও সোহাগ মাস্টার বলেন, দশ বছর আগে অনেক মাছও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যেভাবে মা মাছ ও পোনা নিধন হচ্ছে ভবিষ্যতে এর খোসরত দিতে হবে।

দুবালা গ্রামের জহিরুল ইসলাম ও বাবুল মাস্টার বলেন, হাওরে সকাল থেকে শেষ রাত পর্যন্ত প্রকাশ্যে বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে মা ও পোনা মাছ নিধন হচ্ছে। 

মদন উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। মা মাছ ও পোনা মাছ নিধন রোধে এবং সবাইকে সচেতন করতে শীঘ্রই অভিযান শুরু হবে। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।

মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, অভিযানে যাওয়ার বিষয়ে উপজেলা মৎস কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে।

নেত্রকোনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফজলুল কাবির জানান, উপজেলা মৎস কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবো, যেন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।