গাছ ও বাঁশের খুঁটি দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ

বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের জন্য ব্যবহার করে জীবন্ত গাছ ও বাঁশের খুঁটি। এভাবেই ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার আনাচে-কানাচে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সরবরাহ লাইনের তার নেওয়া হয়েছে গ্রাহকদের বাসাবাড়িতে। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। আতঙ্কে দিন কাটছে ত্রিশালবাসীর।

ত্রিশাল পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের লেকেরপাড়ের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান (৬৫)। তার বাসার পাশেই লেকের পাড়ের ওপরে একটি জীবন্ত কাঁঠাল গাছ রয়েছে। জীবন্ত কাঁঠাল গাছকে খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে স্থানীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ বিভাগের কর্মকর্তারা ২০ থেকে ২৫টি গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন। গাছের সঙ্গে এলোমেলোভাবে জড়িয়ে আছে বিদ্যুতের তার।

ঝুঁকিপূর্ণভাবে সরু বাঁশের খুটির মাধ্যমে বিদ্যুতের তার টানা হয়েছেহাবিবুর রহমান জানান, বারবার বাধা দেওয়ার পরও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা ও আশপাশের লোকজন জোরপূর্বক কাঁঠাল গাছকে খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করে বিদ্যুতের সংযোগ লাইনের তার নিয়ে গেছেন। প্রায়ই গাছে আগুন লেগে বিদ্যুতের তার পুড়ে যায়। অনেকেই অসাবধানতাবশত ওই গাছ স্পর্শ করে বিদ্যুতের শক খেয়েছে। এ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের বলেও কোনও কাজ হয়নি।

শুধু হাবিবুর রহমানের কাঁঠাল গাছ না, উপজেলার আশেপাশে অসংখ্য জীবন্ত গাছ ও বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করে বিদ্যুতের সংযোগ লাইনের তার নিতে দেখা গেছে। ত্রিশাল সদর ইউনিয়নের পূর্ব পাঁচপাড়া গ্রামের মুদি দোকানি শরিফ উদ্দিন জানান, ত্রিশালের হাজার হাজার বিদ্যুৎ সংযোগে জীবন্ত গাছ ও বাঁশের খুটি ব্যবহার করা হয়েছে। তার বাড়ির পাশেই জরাজীর্ণ বাঁশ ব্যবহার করে স্থানীয় মোশারফ হোসেন, শাহজাহান আলী ও আইয়ুব আলীর বাসায় বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

mymensingh trisal pdb line-4স্থানীয় মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রাহকের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে নিয়মের বাইরে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকেন। জীবন্ত গাছ ও বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। মাঝেমধ্যেই অনেক মানুষ না বুঝে গাছে ও বাঁশের খুঁটিতে হাত দেওয়ায় কিংবা জড়িয়ে ধরায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত হয়েছেন।’

ত্রিশাল পৌর এলাকার গৃহিণী লাকী আক্তার বলেন, ‘গাছ ও বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন থাকায় বাচ্চাদের নিয়ে আতঙ্কে সময় কাটে। বাচ্চারা তো বোঝে না, অনেক সময় গাছের পাশেই খেলাধুলা করে। যেকোনও সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

ত্রিশাল পৌরসভাসহ উপজেলায় বিদ্যুৎ পিডিবির ৪২ হাজার ৮০০ গ্রাহক আছে।

জীবন্ত গাছ ও বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করে বিদ্যুৎলাইন সরবরাহ করার বিষয়টি স্বীকার করে ত্রিশাল পিডিবির সহকারী প্রকৌশলী হাসনাইন আহমেদ জিয়াদ বলেন, ‘মেইন সড়ক থেকে গ্রাহকের বাড়ি দূরে হওয়ায় তাদের সিমেন্টের তৈরি খুঁটি দেওয়া সম্ভব হয় না। অনেক গ্রাহক নিজেই বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে থাকেন। অনেক সময় গাছ ব্যবহার করেও গ্রাহকরা বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন বাড়িতে নিয়ে যায়।’ বিদ্যুৎ বিভাগ দ্রুতই ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে আধুনিক মানের খুঁটি ব্যবহারের কথা ভাবছে বলে জানান তিনি। 

এদিকে, ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গ্রাহককে আধুনিক মানের বিদ্যুৎ লাইন দেওয়ার লক্ষ্যে সেন্ট্রাল জোনের মাধ্যমে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। করোনার কারণে প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে এগোচ্ছে। কাজ শুরু করা গেলে জরাজীর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। এর ফলে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সরবরাহের সমস্যার সমাধান হবে এবং দুর্ঘটনা এড়ানো যাবে।