প্রতিমা বানিয়ে চলছে আকাশ সুলতানের সংসার

‘বছর তখন ১০ বছর। তখনই প্রতিমা বানানোর কাজ শিখেছি। ওস্তাদ ছিলেন জয়ন্ত ঘোষ। কাছে ডেকে প্রতিমা বানানোর কাজ শিখিয়েছেন। প্রতিমা বানাতে গিয়ে নিজে হিন্দু না মুসলমান, এমন চিন্তা মাথায় আসেনি।’ এভাবেই অনুভূতি প্রকাশ করলেন ময়মনসিংহ মহানগরীর জুবিলীঘাট এলাকার রঘুনাথ জিউর আখড়া মন্দিরের প্রতিমা কারিগর আকাশ সুলতান।

পূজা এলেই ব্যস্ততা বাড়ে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বাসিন্দা আকাশ সুলতানের। বাঁশ, কাঠ আর কাদামাটি দিয়ে প্রতিমা গড়ায় নিবিষ্ট মনোযোগ তার। অন্য কারিগরদের সঙ্গে রং-তুলির আঁচড়ে সাজিয়ে তুলছেন দুর্গার প্রতিমা।

দিনমজুর বাবার আর্থিক টানাটানিতে লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি আকাশের। ঘরের পাশেই থাকতেন রঘুনাথ জিউর আখড়া মন্দিরের জয়ন্ত। তার হাত ধরেই প্রতিমা তৈরির কাজ শেখা আকাশের।

প্রতিমা গড়ায় নিবিষ্ট মনোযোগ তারওই মন্দিরে রবিবার (১০ অক্টোবর) গিয়ে দেখা যায়, শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রতিমা বানানোর কাজ প্রায় শেষের দিকে। চলছিল প্রতিমা সাজানোর শেষ মুহূর্তের কাজ।

আকাশ জানালেন, ‘পরিবারে টানাটানি ছিল। পড়ালেখা হয়নি। তবে নিজেকে শিল্পী ভাবতে ভালো লাগে। এখন সারা বছর প্রতিমা বানাই। দুর্গাপূজার তিন মাস আগে কাজের অনেক চাপ থাকে।’

আকাশ আরও জানালেন, ‘এ কাজের পারিশ্রমিক দিয়ে সংসার চালাচ্ছি। আমার কাছে আপাতত এটাই বড় কথা।’

তিনি আরও জানান, ‘আমার কিছু বন্ধু ও আত্মীয় আমাকে এ কাজ ছেড়ে দিতে বলেছেন। কিন্তু আমার পড়ালেখা নেই। আর কোনও কাজও পারি না। প্রতিমা বানিয়েই জীবিকা চালাচ্ছি। দুর্গাপূজার কাজ শেষে ওস্তাদ আমার হাতে ৩০ হাজার টাকাও তুলে দেন।’

ময়মনসিংহ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক শংকর সাহা জানান, ‘প্রতিমা বানানো কঠিন কাজ। আকাশ এ কাজে কারুশিল্পীর মর্যাদা পেয়েছে। মুসলমান ও হিন্দু শিল্পীর মধ্যে ভেদাভেদ নেই। সব শিল্পীই আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র।’