ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনা

পরিবারের ৪ জনকে হারিয়ে সড়কে বসেই বিলাপ

‘ব্যস্ততার কারণে কোরবানির ঈদে বাড়িতে যাওয়া হয়নি। ফলে নাতি আব্দুল্লাহর খৎনাও করানো সম্ভব হয়নি। ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে সবাই একসঙ্গে যাচ্ছিলাম। আশা ছিল, আব্দুল্লাহর খৎনা করিয়ে এলাকাবাসীকে দাওয়াত করে ধুমধাম অনুষ্ঠান করবো। কিন্তু কপালে আর সইলো না। পরিবারের বাবা, মা, ছোটবোনসহ আব্দুল্লাহ বাস দুর্ঘটনায় দুনিয়া ছেড়েই চলে গেলো। এখন বাড়ি গিয়ে বড় ভাইকে কী জবাব দেবো?’

কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশালের চেলেরঘাটে ট্রাকের সঙ্গে বাসের ধাক্কায় নিহত ফজলুল হক ওরফে হুজু’র চাচা আব্দুর রশিদ। এই দুর্ঘটনায় নিহত ছয় জনের চার জনই ওই পরিবারের।

আব্দুর রশিদ রাস্তায় বসে বিলাপ করতে করতে জানান, নিহত ফজলুল হক তার আপন বড় ভাই কমর উদ্দিনের ছেলে। ভাতিজার পরিবারসহ তিনি ঢাকায় সবজির ব্যবসা করেন। সবাই একসঙ্গেই থাকেন। সুযোগ পেলেই তারা বাড়িতে যান। করোনার কারণে গত কোরবানির ঈদে বাড়ি যাননি। ১০ বছর বয়সী আব্দুল্লাহ প্রাইমারি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। আর নিহত আজমিনা (৮) প্রথম শ্রেণিতে পড়তো।

তিনি আরও জানান, ভাতিজা ফজলুর বড় শখ ছিল, গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ছেলের খৎনা করিয়ে আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীকে দাওয়াত করে খাওয়াবেন। এটা আর হয়ে উঠলো না। মনের দুঃখ রয়েই গেলো।

উল্লেখ্য, শনিবার (১৬ অক্টোবর) ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের চেলেরঘাটে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চার জনসহ ছয় জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। 

শেরপুরগামী রহিম পরিবহনের একটি বাস (ময়মনসিংহ গ ১১-০৯৪৮) ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল উপজেলার চেলেরঘাট নামক স্থানে ওভারটেকের সময় দাঁড়িয়ে থাকা বালুবাহী ড্রাম ট্রাককে (ঢাকা মেট্রো ট ১৫-৮৪৪৩) ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ১০ জন। তাদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানে আরেকজন মারা যান।

নিহতরা হলেন- ফুলপুর উপজেলা হুজু (৩০), তার স্ত্রী ফাতেমা (২৮), ছেলে আব্দুল্লাহ (১০) ও মেয়ে আজমিনা (৮)। বাকি দুই জনের নাম-পরিচয় এখনও জানা যায়নি। আহতরা ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে নিগোরকান্দা গ্রামের ফাহাদ, বাবুল ও ফুলপুর উপজেলার রফিকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।