শস্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি আঁকলেন কৃষক

৩৩ শতক জমির ফসলি মাঠ। বিশাল ক্যানভাস। যেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতিকৃতি। সরিষা, লালশাক ও পালংশাক দিয়ে এই প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলেছেন ময়মনসিংহের কৃষক আব্দুল কাদির।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের পাড়াখালবলা গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে কৃষক আব্দুল কাদির এর আগে গত বছর একই ফসলের মাঠে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলেছিলেন। পাশাপাশি ফুটিয়ে তুলেছিলেন স্মৃতিসৌধ, নৌকা, শাপলা ও মুজিববর্ষ। তখন তার এই চিত্রকর্ম আলোচিত হয়েছিল। এ নিয়ে আব্দুল কাদির বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলেছি।

সরিষা, লালশাক ও পালংশাক দিয়ে এই প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলেছেন ময়মনসিংহের কৃষক আব্দুল কাদির

এবার কৃষি অধিদফতর থেকে সরিষা, গম, লাল ও পালংশাকের বীজ নিয়ে গত ২০ নভেম্বর ওই জমিতে বপন করেন। সেই বীজ ফসল হয়ে অন্যরকম এক রূপ ধারণ করে। যেখানে ভেসে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতিকৃতি। একই সঙ্গে ফুটে উঠেছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, নৌকা, শাপলা, দোয়েল পাখি, স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

এসব প্রতিকৃতির বিষয়ে আব্দুল কাদির বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যতটা ভালোবাসি, তার পরিবারের সদস্যদেরও ততটা ভালোবাসি। প্রথমে মনের চোখ দিয়ে কল্পনা করে ছবি এঁকেছিলাম। পরে ফসলের মাঠে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলেছি।’

প্রতিকৃতির পরিচর্যা করছেন কৃষক আব্দুল কাদির

তিনি বলেন, ‘মনের মাধুরী মিশিয়ে এই কাজ করেছি। লালশাক দিয়ে পদ্মা সেতু, লাল পালংশাক এবং সরিষা দিয়ে শহীদ মিনার, লাল শাক দিয়ে দোয়েল পাখি, লালশাক দিয়ে শাপলা, লালশাক ও সরিষা দিয়ে নৌকা, লালশাক দিয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং গম দিয়ে ধন্যবাদ এঁকেছি।’

আব্দুল কাদির বলেন, ‘গতবারের মতো এবারও ফসলের মাঠে বঙ্গবন্ধুর পরিবারসহ জাতীয় বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপনের জন্য প্রথমে কল্পনায় ছবি এঁকেছি। পরে সেই ছবি কাগজে এঁকে মাঠ প্রস্তুত করে বীজ বপন করি। এই কাজে পাড়াখালবলা বন্ধুমহল ডিজিটাল ক্লাবের সদস্যরা আমাকে সহায়তা করেছেন। ৩৩ শতক খুব কম জমি। অনেক কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে জমির পরিমাণ বাড়লে ভবিষ্যতে আরও অনেক কিছু করার স্বপ্ন আছে।’

আব্দুল কাদিরের বাবা তারা মিয়া বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন আমাদের। সেই ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন ফসলের মাঠে আমার ছেলে কাদির ফুটিয়ে তুলেছে। ছেলের এমন কাজে আমি গর্বিত।’

সরিষা, লালশাক ও পালংশাক দিয়ে এসব প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে

বন্ধুমহল ডিজিটাল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাইমুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘আব্দুল কাদিরের এই কাজে সহায়তা করেছি আমরা। কৃষক আব্দুল কাদির আমাদের গর্ব। তিনি মনের মাধুরী মিশিয়ে বঙ্গবন্ধুর পরিবারসহ আমাদের জাতীয় কিছু জিনিসের প্রতিকৃতি ফসলের মাঠে তুলে ধরেছেন।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মতিউজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আব্দুল কাদির ফসলের মাঠে এসব প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। এই ধরনের উদ্যোগ কৃষকদের ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত করবে বলে আমি মনে করি।’

সরিষা দিয়ে শহীদ মিনার আঁকা হয়েছে

এদিকে, ফসলের মাঠে বঙ্গবন্ধুর পরিবারসহ জাতীয় কয়েকটি বিষয়ের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলার খবর পেয়ে আব্দুল কাদিরের ফসলের মাঠে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়ি পড়েছে এসব প্রতিকৃতির ছবি। দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষ। ফসলের মাঠে এই চিত্রকর্ম দেখে মুগ্ধ তারা। চলছে ছবি ও সেলফি তোলার প্রতিযোগিতা।