গফরগাঁও সরকারি কলেজের শিক্ষকদের মারধর, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা

গফরগাঁও সরকারি কলেজে অনার্স এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফি কমানোকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের মারধর ও অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। তবে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন কলেজটির শিক্ষকরা। এ ঘটনার বিচার দাবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। 

জানা যায়, বুধবার (৮জুন) দুপুরে শিক্ষকদের ওপর হামলার পর আন্দোলনকারীরা বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। 

গফরগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ এবং সেশন ফি বাবদ পাঁচ হাজার ৬০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। এই টাকা রকেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জমা দেওয়ার কথা। কলেজের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছেন এবং ব্যাংকে তারা টাকাও জমা দিয়েছেন। তবে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী টাকা জমা দেয়নি। বুধবার তাদের নিয়ে ক্যাম্পাসে আসে ছাত্রলীগ কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মুরাদ হাসান ঝিনুক, সাব্বির হোসেন, সীমান্ত ও রিবান। তারা পরীক্ষা চলাকালে হলে প্রবেশ করে খাতাপত্র ছিনিয়ে নেয়। পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দিতে চাপ দেয়। পরে তারা কলেজের শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায় এবং কলেজের শিক্ষক ডক্টর ইমরান হোসেনকে মারধর করে। এ সময় আহত হয় আরেক শিক্ষক ড. রেজোয়ান আহমেদ। এ ঘটনায় জরুরি সভা করে বিচার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষকরা।

অধ্যক্ষ আরও জানান, বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষকদের কলেজ ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের সহায়তায় শিক্ষকরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় গফরগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ পাওয়ার পরও পুলিশ কর্তৃপক্ষ আইনগত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।  

কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী জাকিয়া ফেরদৌস বলেন, কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে বাপের বয়সী শিক্ষককে গালে থাপ্পড় দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ নেতারা। এই ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নেবে না।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ কলেজ শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মুরাদ হাসান। তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়েই ছাত্রলীগ আন্দোলনে আছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়মের বাইরে অতিরিক্ত টাকা ফরম পূরণের জন্য ধার্য করেছে এবং হাতে হাতে না নিয়ে রকেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের আরও অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। এসব দাবি দাওয়া নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ আন্দোলনে নেমেছে। কোনও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা হয়নি বলে দাবি করেন ঝিনুক।

এ বিষয়ে গফরগাঁও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদি হাসান শানিল বলেন, ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে আন্দোলনে আছে। তবে হামলা ও ভাঙচুর বা লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ছাত্রলীগ জড়িত না।   

গফরগাঁও থানার ওসি ফারুক আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বুধবার রাতে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। অভিযোগে ছাত্রলীগের চার নেতা সাব্বির হোসেন, মুরাদ হাসান ঝিনুক, সীমান্ত এবং রিবানের নেতৃত্বে শিক্ষকদের ওপর হামলার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখার কোনও ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি।