বাজার নিয়ন্ত্রণে মিল মালিকদের মনিটরিংয়ে আনতে হবে: কৃষিমন্ত্রী

খোলা বাজার অর্থনীতিতে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, খোলা বাজার অর্থনীতিতে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না, কেউ পারেওনি। তবে বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিশেষ করে মিল মালিকরা হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে বিরাট মুনাফা করার চেষ্টা করে। তাদের মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কৃত্রিম বাজার সংকট যারা তৈরি করে, তাদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর বিএডিসির ট্রেনিং সেন্টারের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে কাজ করছে। দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত আছে। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার ওএমএস, টিসিবিসহ বিভিন্ন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চালু রেখেছে। 

তিনি আরও বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ অবস্থা টিকিয়ে রাখতে সরকার ২০১৮ সালে নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিল। মানুষকে পুষ্টিকর ও দানাদার খাদ্য দিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে, এতে সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়েছে। এই অবস্থা মোকাবিলায় আমরা ৫০ লাখ পরিবারকে মাত্র ১৫ টাকায় চাল দিচ্ছি। গরিব মানুষ যাতে কষ্ট না পায় এজন্য ভিজিএফ, ওএমএস ও টিসিবির মাধ্যমে পর্যাপ্ত খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এতে করে সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। এছাড়া আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসলের উৎপাদন কীভাবে বাড়ানো যায়, সে লক্ষ্যেও কাজ করে যাচ্ছি।

বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগের এ প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, বিএনপি তিন মাস আন্দোলন করেছিল। গাড়ি পুড়িয়ে, রেল লাইন তুলে, বিদ্যুতের লাইন কেটে তারা দুর্ভোগ বাড়িয়েছে, তবে তারা সফল হয়নি। খালেদা জিয়া লজ্জাবনত মাথায়, মুখে কালি মেখে নিজ ঘরে ফিরেছেন। বিএনপিকে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করতে হবে। উসকানিমূলক বক্তব্য আর তাণ্ডব চালিয়ে আন্দোলনে সফল হওয়া যাবে না। এটা যখনই করতে যাবে জনগণ বাঁধা দেবে।

বিএডিসির ট্রেনিং সেন্টারের উদ্বোধন শেষে নগরীর টাউন হলে অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘বিদ্যমান শস্য বিন্যাসে তৈল ফসলের অন্তর্ভুক্তি এবং ধান ফসলের অধিক ফলনশীল জাত সমূহের উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় যোগ দেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এমপি আনোয়ারুল আবেদীন খান ও কাজীম উদ্দিন আহমেদ ধনু, সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু, বিএডিসি চেয়ারম্যান এএফএম হায়াতুল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এহ্তেশামুল আলম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম, ব্রি’র পিএসও ড. মো. ইব্রাহিম, ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক আশরাফ উদ্দিনসহ কৃষি বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

কর্মশালায় বক্তারা বলেন, ভোজ্য তেল ফসলের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগের সব প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করতে হবে। বছরে তেল আমদানিতে দেশে ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে। শস্য বিন্যাসের মাধ্যমে তেল ফসলের উৎপাদন বাড়িয়ে বিদেশ থেকে তেল আমদানি কমপক্ষে ৪০ ভাগ কমানো সম্ভব বলে জানান তারা।