ময়মনসিংহের পুরনো ব্রহ্মপুত্রের থানাঘাট এলাকায় বেড়িবাঁধের দুই পাশের জায়গা দখল করে দুই শতাধিক বাড়িঘর ও দোকানপাট তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি টাকা নিয়ে নদের এসব জায়গা বরাদ্দ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বসতি নির্মাণ করা মানুষজন।
ব্রহ্মপুত্রের থানাঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, থানাঘাট এলাকার বাসিন্দা শাহনাজ বেগম চায়ের দোকান করার জন্য ব্রহ্মপুত্রের জায়গায় টিনের ঘর তুলছেন। সরকারি জায়গায় ঘর তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে শাহনাজ বেগম বলেন, ‘সমিতির নেতাদের তিন হাজার টেহা দিয়ে নদের জায়গা পাইছি। জায়গা ভরাট করে এখন চা দোকান দিমু। ঘর তুলতাছি। স্বামী তো আগেই আমগোরে ছাইড়া দিয়া চলে গেছে। দুই পোলারে নিয়া নদের পাড়ে থাহি। চা দোকান কইরা আমাগোর সংসার চলবো।’
তিনি জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্রের বেড়িবাঁধ সড়কের দুই পাশে যেসব দোকানপাট ও ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে, সবগুলোর জন্য সমিতির নেতাদের টাকা দিয়ে জায়গা নিতে হয়েছে। টাকা ছাড়া কেউ এখানে ঘর করতে পারেনি। সমিতির নেতাদের নাম জানতে চাইলে জানাননি শাহনাজ।
শাহনাজ বেগমের পাশেই এক মাস আগে জায়গা ভরাট করে হোটেল করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুর রহমান। হোটেলের কর্মচারী লাল মিয়া জানান, সমবায় সমিতির নেতারা এখানকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের সঙ্গে কথা না বলে বাইরের কেউ এখানে জায়গা নিতে পারেন না।
তিনি বলেন, ‘এক বছর আগে বেড়িবাঁধের দুই পাশের অবৈধ দোকানপাট ও বাড়িঘর উচ্ছেদ করেছিল প্রশাসন। তখন বলেছিল, এখানে বড় করে সড়ক করা হবে। কিন্তু সড়ক তো করা হলো না। এরপর ধীরে ধীরে আবারও নদের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাট ও ঘরবাড়ি।’
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় বাসিন্দা সমশের আলী বলেন, ‘প্রশাসন অবৈধ বাড়িঘর ও দোকানপাট উচ্ছেদ করে সমিতির নেতাদের টাকা কামানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের জায়গায় দোকান কিংবা ঘর তোলার জন্য নেতাদের তিন থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। টাকা না দিলে কেউ জায়গা পায় না। সরকারি জায়গা সমিতির নেতাদের দখলে।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ব্রহ্মপুত্র বাস্তুহারা কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সমিতির কোন নেতা টাকা নিয়ে নদের জায়গা বরাদ্দ দিচ্ছেন, তা আমার জানা নেই। তবে মাঝেমধ্যে শুনি, সমিতির নেতারা টাকা-পয়সা নিয়ে ব্রহ্মপুত্রের জায়গা বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। তারা কারা, আমাদের তাদের চিনি না।’
এ বিষয়ে পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় টাকা নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের জায়গা বরাদ্দ দিচ্ছেন কয়েকজন প্রভাবশালী। এ বিষয়ে প্রশাসনের সোচ্চার হওয়া জরুরি।’
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টাকা নিয়ে ব্রহ্মপুত্রের জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’