লাখো মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত অধ্যক্ষ মতিউর রহমান

লাখো মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক ধর্মমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান (৮২)। ময়মনসিংহ নগরীর আকুয়া মোড়ল বাড়ি জামে মসজিদ মাঠে মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৫টায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে আকুয়া মোড়ল বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। 

জানাজায় অংশ নিয়েছেন নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সাজ্জাতুল হাসান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম ফেরদ্দৌস জিল্লুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লাখো মানুষ।

ময়মনসিংহ নগরীর আকুয়া মোড়ল বাড়ি জামে মসজিদ মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়

এদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তাকে শেষবারের মতো দেখতে ভক্তরা তার বাড়িতে ভিড় জমান। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে লাখো মানুষ ও ভক্তের ঢল নামে। বিকাল ৩টার দিকে দুই মেয়েসহ স্বজনরা অস্ট্রেলিয়া থেকে ময়মনসিংহের বাড়িতে পৌঁছালে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মেয়েরা বাবার মরদেহের পাশে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের সান্ত্বনা দিয়ে সমবেদনা জানান স্বজন ও পরিচিতজনেরা।

বিকাল সাড়ে ৩টায় মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর চরপাড়া নয়াপাড়া এলাকায় নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান একাডেমি প্রাঙ্গণে। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধাঞ্জলী দেন। বিকাল ৪টায় মরদেহ নেওয়া হয় নিজ জন্মস্থান নগরীর আকুয়া মোড়ল বাড়ি এলাকায়। সেখানেও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ শ্রদ্ধা জানান। 

এর আগে সোমবার সকালে মতিউর রহমানকে প্রথমে তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল আলমগীর মনসুর (মিন্টু) মেমোরিয়াল কলেজ প্রাঙ্গণে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আগে থেকেই হাজারো নেতাকর্মী, অনুসারী ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ তাকে শেষবারের মতো দেখতে ভিড় জমান। এখানে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা। পরে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় নগরীর শিববাড়ী রোডের জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। সেখানে দলের জেলা ও মহানগর কমিটির নেতারা তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর মরদেহ নেওয়া হয় নগরীর আঞ্জুমান ঈদগাহ ময়দানে। সেখানে একাত্তরের এই মুক্তিসেনানীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। সেখানেই তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ঈদগাহ ময়দান কানায়-কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এ সময়ে রাস্তায় লোকজনকে দাঁড়িয়ে জানাজায় অংশ নিতে দেখা যায়। এটিকে ময়মনসিংহের স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জানাজা বলে দাবি করেছেন অনেকে। এরপর দুই মেয়ে অস্ট্রেলিয়া থাকায় জানাজা শেষে তার মরদেহ ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হিমাগারে রাখা হয়। 

এটিকে ময়মনসিংহের স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জানাজা বলে দাবি করেছেন অনেকে

গত রবিবার রাত ১১টার দিকে ময়মনসিংহ নগরের ধোপাখলা এলাকায় অবস্থিত একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পরিবার ও স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, মতিউর রহমানের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরের নেক্সাস কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে রাত পৌনে ৩টার দিকে হাসপাতালের সামনে তার পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুর খবরটি জানানো হয়।

১৯৪২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মতিউর রহমান। বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহকে মুক্ত ঘোষণা করা হয়। তিনি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে গত বছর একুশে পদক পান।