ময়মনসিংহ-ঢাকা চার লেন মহাসড়কের দুই লেন দখল করে রেখেছে বালুবোঝাই ট্রাক। দীর্ঘ সময় ধরে মহাসড়কে এসব ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষজন। বেড়েছে যানবাহনের চাপ। এ অবস্থায় ট্রাকগুলো মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকায় দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে। বালুবাহী ট্রাক ও অবৈধ তিন চাকার যানের কারণে আগামী কয়েকদিন ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে ঈদযাত্রায় যানজট চরম আকার ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন বাসচালকরা।
তবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব যানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও এখনও কার্যকর কোনও উদ্যোগ নেয়নি জেলা প্রশাসন এবং ট্রাফিক পুলিশ।
বুধবার (২৬ মার্চ) সরেজমিনে দেখা গেছে, ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের শিকারিকান্দা, চুরখাই, ত্রিশাল, ভরাডোবাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই লেন দখল করে বালুবোঝাই ট্রাক সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। এর সঙ্গে রয়েছে অবৈধ তিন চাকার যান। ফলে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এসব এলাকায় ধীরগতিতে চলছে যাত্রীবাহী বাস। গাড়ির চাপ আরও বাড়লে আসন্ন ঈদে যানজট চরম আকার ধারণ করবে।
এরই মধ্যে বুধবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের এসব এলাকায় পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। বাড়তি যানবাহনের চাপে শিকারিকান্দা বাইপাস মোড় হয়ে ময়না মোড়, পাটগুদাম ব্রিজ মোড় থেকে শম্ভুগঞ্জের চায়না মোড় পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে পিঁপড়ার গতিতে চলছে যানবাহন। এতে ঢাকা থেকে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন।
ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী সৌখিন পরিবহন বাসের চালক কামরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নেত্রকোনার দুর্গাপুর ও শেরপুর থেকে বালুবোঝাই করে আসা ট্রাকগুলো প্রতিদিন সকালে ময়মনসিংহের শিকারিকান্দা থেকে শুরু করে গাজীপুরের চৌরাস্তার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকে। দিনের বেলায় বালুবোঝাই ট্রাক রাজধানী ঢাকায় ঢুকতে পারে না। ফলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহাসড়কের দুই লেন দখল করে দাঁড়িয়ে থাকে। রাত ৮টার পর ট্রাকগুলো ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। দীর্ঘ সময় দুই লেন দখল করে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় এই সড়কে সারা বছর যানজট লেগেই থাকে। আসন্ন ঈদে এসব ট্রাকের কারণে যানজট চরম আকার ধারণ করবে। ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যাবে।’
গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহের তারাকান্দা গ্রামের বাড়িতে আসা বাসযাত্রী চামেলী বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বুধবার সেহরি খেয়ে ফজর নামাজ পড়ে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হই। সকাল ৭টায় গাজীপুরে চৌরাস্তা মোড়ে শেরপুরগামী বাসে উঠি। সকাল থেকে বাস ভালোভাবেই চলছিল। ময়মনসিংহের ভালুকার পর থেকেই বিভিন্ন মোড়ে ট্রাকের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়। শিকারিকান্দা বাইপাস মোড়ে এসে প্রায় দুই ঘণ্টা যানজটে আটকে আছি। রাস্তা ট্রাকের দখলে। সব যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছেন।’
ভোগান্তির কথা জানিয়ে আলম এশিয়া পরিবহনের বাসচালক জামাল হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কের ময়মনসিংহ অংশেই যানজট বেশি। বিশেষ করে শিকারিকান্দা বাইপাস মোড় থেকে সম্মোহন চায়নামোড় পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। গাড়ি একেবারেই ধীরগতিতে চালাতে হচ্ছে। কারণ দুই লেনে ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। গন্তব্য পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যায়।’
আরেক বাসচালক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বালুর ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকার পাশাপাশি মহাসড়কে অবৈধভাবে চলছে তিন চাকার যানবাহন। বেপরোয়া গতিতে এসব যানবাহন চলায় বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ঈদে এসব যানের কারণে যানজট আরও বাড়বে। প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
নির্ধারিত স্ট্যান্ড না থাকায় সড়ক দখল করে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কথা স্বীকার করেছেন ট্রাকচালকরা। ট্রাকচালক ফরিদ মিয়া বলেন, ‘আমাদের জন্য নির্ধারিত কোনও ট্রাকস্ট্যান্ড নেই। বাধ্য হয়ে আমরা সড়ক দখল করে ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাখি। ট্রাকস্ট্যান্ড তৈরির জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি আমরা।’
তবে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা এসব বালুবাহী ট্রাক ও তিন চাকার যানের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দেওয়ার পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা বালুবোঝাই ট্রাকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। ঈদে যেন মহাসড়ক ক্লিয়ার থাকে সে বিষয়ে পুলিশ সজাগ আছে।’
ময়মনসিংহ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খাইরুল বাসার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদে ঘরে ফেরা এবং কর্মস্থলে ফেরা মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আসন্ন ঈদে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হবে না।’