ভাঙা নয়, মূল নকশায় ফিরছে ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের উদ্যোগে নির্মিত ভাস্কর্য ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভেঙে ফেলা হচ্ছে—এমন তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হলেও মূলত ভাঙা নয়, ভাস্কর্যটি পূর্বের নকশায় ফিরছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।

মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের পাশের পুকুরে নির্মিত ভাস্কর্যটিকে মূল নকশায় নিতে কিছু অংশ ভাঙা হয়। পরে ‘ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে’—বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। এরপরই ভাস্কর্যটি ভাঙার পক্ষে-বিপক্ষে তৈরি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখরের উদ্যোগে শতাধিক গাছ কেটে প্রায় ৪ কোটির অধিক টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য। নির্মাণের আগে স্থাপনাটির একটি নকশা প্রকাশিত হলে সেই স্থাপনাটিকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ লক্ষ করা গেলেও স্থাপনাটি নির্মাণের পর দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। স্থাপনার নকশার সঙ্গে বাস্তবের ছিল না কোনও মিল। ভাস্কর্যতে বসানো হয়েছিল ‘অদ্ভুত’ দুটি হাতের স্থাপনা।

অভিযোগ রয়েছে সাবেক উপাচার্য ড. সৌমিত্র শেখরের নির্দেশে শেষ সময়ে নকশা পরিবর্তন করে দুই হাতের একটি স্থাপনা যুক্ত করা হয়। সে সময় স্থাপনাটিকে কেউ কেউ ‘সাম্প্রদায়িক স্থাপনা’ হিসেবে আখ্যা দেন। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর স্থাপনাটি ভেঙে ফেলার দাবি তোলেন অনেকেই। সেই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি স্থাপনাটিকে ভেঙে পূর্বের নকশায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ নিয়ে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আহমদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘অঞ্জলি লহ মোর—শব্দের ভেতরে আগেরকার দুর্নীতিবাজ ভিসি সৌমিত্র শেখর সাহেবের পার্শ্ব দেশের প্রতি ও সনাতন ধর্মের প্রতি প্রেম ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। এখানে না আছে আমাদের ভূখণ্ডের কোনও নির্যাস, না আছে আমাদের জাতিসত্তার কোনও পরিচয়। অর্থাৎ এটা স্পষ্টতই একটা সাম্প্রদায়িক প্রতীক।’

স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান রনি বলেন, ‘যেকোনও দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য কিছু বিষয় আগে থেকেই ভাবতে হয়। প্রথমত, এই উন্নয়ন পরিবেশের কোনও ক্ষতি করবে কি না, পরিবেশের জন্য উপকারী কি না, অথবা আদৌ সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না। কিন্তু আমার মনে হয়, “অঞ্জলি লহ মোর”–এর ক্ষেত্রে এসব কোনও দিকই বিবেচনা করা হয়নি। অনেকে দেখছি নজরুলের গানের সঙ্গে ভাস্কর্যটির সামঞ্জস্য খুঁজতে চাচ্ছেন। কিন্তু এটা কি হতে পারে না যে, ভাস্কর্যটি টিকিয়ে রাখার জন্যই এর নাম দেওয়া হয়েছিল “অঞ্জলি লহ মোর”।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ভাঙা নয়, বরং মূল নকশায় ফিরছে “অঞ্জলি লহ মোর”। ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের যে কয়েকটি দাবি ছিল সেগুলোর মধ্যে ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলার দাবি ছিল। কিন্তু আমরা অন্যান্য দাবি পূরণে উদ্যোগ নিলেও সে সময় ভাস্কর্যটি নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা এখন এটি সংস্কারের কাজ হাত দিয়েছি। ভাস্কর্যটির মূল যে ডিজাইন ছিল সেই ডিজাইনে এখন ফিরবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভাস্কর্যটি যেভাবে তৈরি করার কথা ছিল, আগের প্রশাসন তা করেনি। তাই ৫ আগস্টের পর এটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়। বর্তমানে সেটি ভেঙে নতুন করে সংষ্কারের কাজে হাত দেওয়া হলে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা ভাস্কর্যটি সংস্কার করছি যেন জলাধারটির সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পায়। আজকেও ডিনস কমিটির একটি মিটিং ছিল, সেখানে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহিত উল আলমের সময়ে তার উদ্যোগে কলা অনুষদের সামনের পুকুরটির ওপর নির্মিত হয়েছিল ‘সিন্ধু সারোস’ নামের একটি স্থাপনা। অনেকেই সেটিকে প্রমোদ তরী বা ভাসমান ঘরও বলতো, যার সৌন্দর্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হওয়ার পর ‘সিন্ধু সরোস’ স্থাপনাটি ভেঙে স্থাপন করেন ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য।