লিপু হত্যা: তিন মাসেও অভিযোগপত্র নেই, জমা পড়েনি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন

মোতালেব হোসেন লিপুরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপু হত্যার তিন মাসেও অভিযোগপত্র দিতে পারেনি পুলিশ। জমা পড়েনি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। উদঘাটন হয়নি হত্যার কারণও। তবে চলতি মাসের শেষের দিকে মামলা সংশ্লিষ্ট ভালো তথ্য জানানো সম্ভব হবে বলে পুলিশ দাবি করছে।

এদিকে, মামলার তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিভাগের শিক্ষক ও লিপুর সহপাঠীরা। লিপুর সহপাঠী রাইসা জান্নাত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লিপু হত্যার তিন মাস পেরিয়ে গেল, অথচ বিচারের কোনও অগ্রগতি আমরা দেখতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে একজন লিপু নয়, অনেক লিপুকে হারাবো আমরা। অপরাধীরা শাস্তি না পাওয়ায় অবাধে তারা এসব হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।’

দ্রুত বিচার দাবি করে আরেক সহপাঠী সাব্বিরা ইয়াসমিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এতদিনেও একটা হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় না, তাহলে কীসের মানুষ হওয়া আর কীসের নিরাপত্তা?’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিন মাসেও মামলার কোনও অগ্রগতি আমরা দেখছি না। তাই আমরা দাবি জানাচ্ছি, পুলিশ দ্রুত সঠিক অপরাধীদের সাব্যস্ত করে চার্জশিট দাখিল করুক।’

জানা যায়, সদ্য বিদায়ী বছরের ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের ড্রেন থেকে লিপুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের দিন মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম, পিবিআই, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। লিপুকে হত্যা করা হয়েছিল বলে ওই সময় পুলিশ ও ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। ওইদিন বিকালে লিপুর চাচা মো. বশীর বাদী হয়ে নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওই সময় প্রক্সি জালিয়াত চক্রের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসে। এমনকি লিপুর চাচা মো. বশীর বলেছিল, প্রক্সি দিতে গিয়ে ধরা পড়ার পর থেকে তাকে হুমকি-ধামকি দেওয়া হতো। হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক বছর আগে রাজশাহীতে একটি চাকরি পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে ধরা পড়ে লিপু। এতে তার তিনমাস জেলও হয়েছিল বলে জানা যায়।

লাশ উদ্ধারের দিন লিপুর রুমমেট মনিরুল ইসলামকে আটক করা হলেও তিনদিন পর হত্যা মামলায় মনিরুলকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। কিন্তু ৮ নভেম্বর জজকোর্ট থেকে মনিরুল জামিন পায়। জামিনের আগে মনিরুলকে চারদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ডে মনিরুলের দেওয়া তথ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন সম্ভব বলে তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা অশোক চৌহান দাবি করেছিলেন। এরপর মামলার তদন্তভার পান নতুন তদন্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসান।

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি সেনসিটিভ মামলা। আমরা সব সাইট দেখতেছি। তবে লিপুর পরীক্ষা সংক্রান্ত যে বিষয় (প্রক্সি জালিয়াত চক্র) শোনা গেছে, ওই বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’

লিপুর রুমমেটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এর আগে যাকে (লিপুর রুমমেট মনিরুল) গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল, সে জামিনে আছে। বর্তমানে পরীক্ষা দিচ্ছে শুনেছি। সে জবানবন্দিতে যেসব তথ্য দিয়েছিল, তাতে হত্যাকাণ্ডে সরাসরি নিজেকে ইনভলভ করেনি সে। তবে তার কাছ থেকে কিছু তথ্য নিয়ে হত্যার লিংক খোঁজার চেষ্টা করছি। লিপুর চালচলন কেমন, কার সঙ্গে মিশতো, কী কী করতো-এই তথ্যগুলো তার কাছ থেকে পাওয়া গেছে। ওই তথ্যের লিংক পাওয়ার চেষ্টা করছি। চলতি মাসের শেষের দিকেই ভালো এচিভমেন্ট আসার সম্ভবনা আছে।’

/বিটি/

আরও পড়ুন:

সিপিবি'র মহাসমাবেশে বোমা হামলার ১৬ বছর: সাক্ষী না পাওয়ায় বিচার বিলম্বিত!