বাড়িতে গেলে ইসলামের দাওয়াত দিতো জঙ্গি রাশেদ

জঙ্গি রাশেদ ওরফে আসলাম ওরফে র‌্যাশগুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আসলাম হোসেন মোহন ওরফে রাশেদ সর্বশেষ তার বাড়িতে গিয়েছিল তিন বছর আগে, চাচাতো বোনের মৃত্যুর খবর শুনে। তবে নিখোঁজ হওয়ার আগে বাড়ি গেলে সে সবাইকে ইসলামের দাওয়াত দিতো। রাশেদের স্বজন ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

জঙ্গি রাশেদের বাড়ি নওগাঁর মান্দায়। শুক্রবার (২৮ জুলাই) ভোরে নাটোরের সিংড়া থানা এলাকা থেকে  তাকে গ্রেফতার করে পুলিশের বিশেষ টিম। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সে জেএমবিতে যোগদানের পর থেকে আবু জাররা বা রাশেদ নামে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। গ্রেফতারের পর তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। জঙ্গি রাশেদের গ্রামের বাড়ি

মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে আসলাম ওরফে মোহন (২৪) তার নিজ এলাকার তেঁতুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার করার পর তার নানার বাড়ি রাজশাহী জেলার নওহাটাতে চলে যায়। এরপর সেখান থেকে সে এসএসসি পাস করে এবং পরে রাজশাহী মডেল কলেজ ভর্তি হয়। সেখানে কিছুদিন লেখাপড়া করার পর সে নিখোঁজ হয়ে যায়। রাশেদের একটি বোন আছে, তার বিয়ে হয়ে গেছে। 

মোহনের দাদি সালেহা বিবি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মোহন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। সব সময় আমাদের ইসলাম ধর্মের কথা বলতো। ২০১৬ সালের নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বর মাসের দিকে র‌্যাবের কয়েকজন সদস্য আমাদের বাড়িতে এসে বলে ক্রসফায়ারে মোহন (রাশেদ) মারা গেছে। তার লাশ দেখার জন্য মোহনের মা নাছিমা বেগমকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। নাছিমা লাশ দেখে বলে তার ছেলে নয়।’ ওই সময় ডিএনএ টেস্ট করেও রাশেদের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানান স্বজনরা।

মোহনের চাচা আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘তিন বছর আগে তার চাচাতো বোন মারা গেলে সে মাটি দিতে এসেছিল। এরপর তার সঙ্গে আমাদের আর কোনও যোগাযোগ নাই।’ তিনি আরও জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে রাশেদের বাবা আব্দুস সালাম তার পরিবার নিয়ে নওগাঁ থেকে রাজশাহীর নওহাটা মথুরা নওদাপাড়ায় তার শ্বশুর বাড়িতে অর্থাৎ তারা রাশেদের নানাবাড়িতে বসবাস শুরু করেন। এখনও তারা সেখানেই রয়েছেন।

আবুল কালাম বলেন, ‘মোহনের বাবা আব্দুস সালাম কয়েকটি মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। সেও পলাতক রয়েছে বলে আমি জানি।’বাড়ি আসলে এই ঘরে থাকতো জঙ্গি রাশেদ

রাশেদের চাচি মনোয়ারা বেগম তালাবদ্ধ একটি ঘর দেখিয়ে দিয়ে বলেন, ‘মোহন আসলে এই ঘরে থাকতো। আবার যখন চলে যেতো ঘর তালাবদ্ধ করে রেখে দিত। বাড়ির মহিলাদের আত্নীয়স্বজন ছাড়া অন্য ছেলেদের সামনে যেতে নিষেধ করতো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও পর্দা মেনে চলতে বলতো।’

এ বিষয়ে মান্দা থানার ওসি আনিছুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারী গ্রেফতারের সংবাদ পেয়ে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য কাঞ্চনপুর গ্রামে লোক পাঠিয়েছিলাম। তবে আবু জাররা ওরফে রাশেদ নামে এলাকার কেউ তাকে চেনে না। তার প্রকৃত নাম আসলাম ওরফে মোহন বলে জানা গেছে। আর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

/এফএস/

আরও পড়ুন- 

যেভাবে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে রাশেদ
জঙ্গি রাশেদ ক্রসফায়ারে মারা গেছে ধারণা ছিল এলাকাবাসীর!