পদ্মার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই, হুমকির মুখে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ

rajshahi-3রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে।এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ। এছাড়া পানি বৃদ্ধির ফলে প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সেই সঙ্গে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে রাজশাহীবাসী। তবে এতে আতঙ্ক না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো)কর্মকর্তারা।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘শহর রক্ষা বাঁধ এখন পর্যন্ত ভালো আছে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত বালুর ব্যাগ ও ব্লক মজুদ আছে। এনিয়ে রাজশাহীবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘রাজশাহীতে পদ্মা নদীর বিপদসীমা হচ্ছে ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। তবে পানি এখনও বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। সোমবার ( ১৪ আগস্ট) সকালে পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৬২ মিটার, দুপুরে ছিল ১৬ দশমিক ৬৬ মিটার। তবে যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে করে দু-একদিনের মধ্যে বিপাদসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে রবিবার (১৩ আগস্ট) সকালে পানির উচ্চতা ছিল ১৬ দশমিক ৪২ মিটার, দুপুরে ১৬ দশমিক ৪৮ মিটার, সন্ধ্যায় ১৬ দশমিক ৫৭ মিটার এবং শনিবার ( ১২ আগস্ট) সকালে ছিল ১৬ দশমিক ২৪ মিটার, দুপুরে ১৬ দশমিক ২৯ মিটার ও সন্ধ্যায় ছিল ১৬ দশমিক ৩৩ মিটার।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৬টা, দুপুর ১২টা ও সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মা নদীর পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হচ্ছে।’

রাজশাহীর নদী নিয়ে গবেষণা করেন মাহবুব সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর পদ্মা নদীর গভীরতা বর্তমানের চেয়ে আরও ১৮ মিটার নিচে ছিল। কিন্তু গত চার দশকে পদ্মার তলদেশ ১৮ মিটার ভরাট হয়েছে। পদ্মা নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে এসেছে। এতে করে ভারত সরকার ফারাক্কার সবগুলো গেট খুলে দিলে একসঙ্গে পানির বেশি চাপ সহ্য করতে পারবে না পদ্মা নদী। ফলে মহা বিপর্যয় দেখা দেবে। রাজশাহী শহর ৫-৭ ফিট পানির নিচে থাকবে। রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।’rajshahi-2

মাহবুব সিদ্দিকী আরও বলেন, এর আগে বন্যায় ১৮৫৫ ও ১৮৬৪ সালে রাজশাহী শহর ডুবে গিয়েছিল। তখন শহরের ভেতরে বন্যার পানি ১৫-২০ দিন স্থায়ী ছিল।

তিনি আরও বলেন, ‘১৮৮৫ সালের বন্যার কারণে নগরীর বুলনপুরে শহর রক্ষা বাঁধ তৈরি করা হয়। আর ১৮৬৪ সালের বন্যায় শহর রক্ষার জন্য অবশিষ্ট বাঁধ নির্মিত হয়। অবশিষ্ট এ বাঁধ নির্মিত হয় ১৮৯৫ সালে।’

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘দেশের অন্য এলাকায় বন্যার পানিতে বিপদ সংকেত দেখা দিয়েছে। সাধারণত দেশের বন্যার পরিস্থিতির শেষ দিকে রাজশাহীতে পানি বৃদ্ধি পায়। তাই এসময় রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড কেমন প্রস্তুতি নিয়েছে আমার জানা নেই। তবে বিশেষ করে সোনাইকান্দি বেড়পাড়া, বুলনপুর, পুলিশ লাইন টি-গ্রোয়েন, শ্মশান ঘাট এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধে হুমকির মুখে রয়েছে। আর সরকার থেকে শহর রক্ষা বাঁধের জন্য বরাদ্দ ২৬৬ কোটি টাকার কাজ এখনও শুরু হয়নি। তাই পানি বৃদ্ধি স্বাভাবিক হলে শহর রক্ষা বাঁধকে ভালোভাবে মেরামত করা উচিত। যাতে করে নগরবাসী পানি বৃদ্ধির কারণে ভয় না পায়।’

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘২৬৬ কোটি টাকার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বুলনপুরে গেলেই আপনারা কাজের নুমনা দেখতে পারবেন। এছাড়াও শহর রক্ষা বাঁধ নিয়ে নিয়মিত দেখভাল ও মনিটরিং করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে যা করণীয় তার সব কিছুই করা হবে। শুধু তাই নয়, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’rajshahi-1

এদিকে টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা ১৩ গ্রামের ২০০ হেক্টর ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে। এর ফলে পানিবন্দি হয়েছে হাজারও মানুষ। মানবেতর জীবনযাপন করেছেন তারা। এই বন্যার ফলে ধূরইল ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের তানোর সীমানার এলাকার শীব ও বারনই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে হু-হু করে পানি ঢুকছে এই গ্রামগুলোতে। বন্যার কারণে হাজার হাজার বিঘা জমির ধান, সবজি ক্ষেত, পুকুর, পান বরজ তলিয়ে গেছে।

জানা গেছে, ইতোমধ্যে বেড়িবাঁধ ভেঙে ভীমনগর, মেলান্দি, বেলনা, ঘাসিগ্রাম, বাজে দেওপুর, দেওপুর, মহিষকুন্ডি, ডাঙ্গাপাড়া, পালশা, গোয়ালপাড়া, আমরাইল, শিবপুর, গ্রামের শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নিরাপদ পানি ও খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। গৃহপালিত পশু নিয়ে অনেকটাই বিপাকে পড়েছে বন্যাগ্রস্ত মানুষগুলো। রবিবার বেলা ৪টায় দিকে হঠাৎ পানির প্রবল চাপে ভীমনগর গ্রামের বেডিবাঁধে ভাঙন দেখা দেয়।

রাজশাহী জেলার মোহনপুর ও বাগমারায় রবিবার বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ব্যাপারে প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। তবে ঠিক করার জন্য সময় লাগবে।’

/এআর/