সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে নাশকতা, ৫ বছরেও শেষ হয়নি বিচার

নন্দীগ্রামে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিলজামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে নাশকতা চালানোর ঘটনায় পাঁচ বছরেও বিচার হয়নি। এ ঘটনায় দায়ের করা ৫৬টি মামলার মধ্যে ৫২টির চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোর ফাইনাল রিপোর্টও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে পাঁচ বছরেও মামলাগুলোর বিচার শেষ না হওয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

পুড়িয়ে দেওয়া হয় গাড়ি২০১৩ সালের ৩ মার্চ রাত ২টার পর বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ায় যে, সরকার সাঈদীকে গোপনে ফাঁসি দিয়েছে। এরপর তাকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে। তারা মসজিদের  মাইকে এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এমন গুজব ছড়িয়ে ধর্মভীরু জনগণকে  ঘর থেকে ডেকে বাইরে আনে। ফজরের নামাজের পর লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে জামায়াত ও বিএনপি’র শত শত সন্ত্রাসী মুক্তিযোদ্ধা সংসদ,বাণিজ্য মেলা, স্টেশন, সদর থানা, ফুলবাড়ি, উপশহর, নারুলী, কৈগাড়ি ও স্টেডিয়াম ফাঁড়ি, মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে।

Bogra-03.03.13=01এছাড়া, সদর থানার অস্ত্রাগার ও আশেপাশের মার্কেটগুলোতে লুটপাটের চেষ্টা করে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট,বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, রাকসুর সাবেক ভিপি হায়দার আলীর বাড়ি ভাঙচুর, দুপচাঁচিয়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি মিজানুর রহমান সেলিম খানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, এসএ পরিবহনের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ, টাকা লুট, করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, সদর থানা ও শাজাহানপুর থানায়ও তারা হামলা চালায়।

ইট ফেলে রাস্তা অবরোধ করা হয়সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় নন্দীগ্রাম উপজেলায়। নন্দীগ্রাম থানা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসসহ ১৫টি অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িতে আগুন দেয়। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহর বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। শুধু এ উপজেলায় ১০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। বিভিন্ন স্থানে কাঠের গুঁড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। বিআরটিসির বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সাবগ্রামে রেললাইন উপড়ে ফেলা হয়েছিল। শাজাহানপুরের ফটকি সেতুর রেলিং ভেঙে ফেলা হয়। ক্যাডাররা শহরের সাতমাথাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। জানমাল ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় গুলিবর্ষণ করলে নারীসহ হামলাকারীদের ১৩ জন নিহত হয়েছিল। সন্ত্রাসীদের হামলায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শহর ও কয়েকটি উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেন।

এস এ পরিবহনের কার্যালয়ে চালানো হয় ভাঙচুরবগুড়ার পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল মতিন জানান, এসব ঘটনায় ৯৪ হাজার জনকে আসামি করে  পুলিশ ও ক্ষতিগ্রস্তরা ৫৬টি মামলা করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তারা ৫২ মামলায় দুই হাজারের বেশি আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন। অবশিষ্ট মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ আসামি গ্রেফতার হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, সরকারি দলের আইনজীবীরা অনেক আসামিকে আওয়ামী লীগ সাজিয়ে জামিনের সহায়তা করেছেন। ফলে এসব মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে গত পাঁচ বছরে মামলাগুলো নিষ্পত্তি না হওয়ায় এলাকাবাসীর মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

Bogra-03.03.13=06মামলাগুলো বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত ১, ২, ৩ ও জজকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। আসামিদের প্রায় সবাই জামায়াত-বিএনপি’র নেতাকর্মী ও সমর্থক। এদের বেশির ভাগ গ্রেফতার হলেও  পরে অনেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।

Bogra-03.03.13=07পিপি আরও জানান, সাক্ষী শুরু হয়েছে। আমা করি, চলতি বছরের মধ্যেই মামলাগুলো নিষ্পত্তি হবে।