রাজশাহী নগরীর শিরোইলে ‘জননী’ নামের ১৭২ নম্বর বাসার ছয় তলায় একটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকতেন নিহত দম্পতি হাসান ইমাম (৬৫) ও বেগম হুরুন্নাহার বিলকিস বানু। ভূমি মন্ত্রণালয়ের অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব হাসান ইমাম ও কলেজ শিক্ষক বিলকিস বানুর অবসরটা আনন্দেই কাটছিল। দুই ছেলে কায়সার ইমাম ও তৌকির ইমাম থাকেন কানাডায়। একদম নির্ঞ্ঝাট জীবন। সেই জীবনে আরেকটু আনন্দের ছোঁয়া পেতে নেপাল ভ্রমণে যাচ্ছিলেন তারা। বন্ধু দম্পতি নজরুল ইসলাম ও আখতারা বেগমও তাদের সঙ্গে ছিলেন। বিমান দুর্ঘটনায় তারাও নিহত হয়েছেন।
গত সোমবার (১২ মার্চ) বেলা সাড়ে ১২টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বেসরকারি ইউএস বাংলার একটি উড়োজাহাজে তারা নেপালের উদ্দেশে রওনা হন। নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ল্যান্ড করার সময় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এতে তারা নিহত হন। শুধু তারাই নন, একই উড়োজাহাজে ছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইমরানা কবির হাসি ও তার স্বামী রকিবুল হাসান। হাসি অর্ধদগ্ধ অবস্থায় বেঁচে গেলেও স্বামী রকিবুল চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফেসবুকে জীবিত ও মৃতদের একটি তালিকা দেন। সেই তালিকা থেকেই তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিলকিস বানুর ছোট ভাই বরেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর মো. মালেক বলেন, ‘৯ ভাইবোনের মধ্যে আমার এই বোন পাঁচ নম্বর। তারা স্বামী-স্ত্রী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। একই ক্লাসে পড়তেন। দুলাভাইয়ের বাসা দিনাজপুর। কিন্তু অবসর জীবনে তারা রাজশাহীতেই থাকতেন। তাদের দুই ছেলে কানাডায় থাকে।’
তিনি জানান, সরকারের উচ্চ পদে চাকরির সুবাদে দুলাভাই হাসান ইমাম একাধিকবার বিমানে যাতায়াত করলেও বোন বিলকিস বানুর একবারও আকাশ পথে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। তাই দুই ছেলের আবদার ছিল মা’কে একবার বিমানে করে কানাডা নিয়ে যাবে। কিন্তু মা’র বিমানযাত্রার ভয়ে দুই ছেলের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
অধ্যক্ষ আলমগীর মো. মালেক জানান, তার দুই ভাগ্নে কানাডা থেকে রওনা দিয়েছে। মরদেহ আনতে বড় বোনের ছেলে ও দুলাভাইয়ের ছোট ভাই নেপালে গেছে। সেখান থেকে তারা জানিয়েছে, মরদেহ শনাক্ত করতে পারেনি। কারণ মরদেহ চেনা যাচ্ছে না। এজন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মরদেহ ফেরত পাওয়া যাবে।
ঢাকা থেকে মুঠোফোনে নজরুল ইসলামের জামাই অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন বলেন, ‘মরদেহ শনাক্ত করতে নেপালে গেছেন আমার শাশুড়ির ভাই ডা. মাঈনুদ্দীন চিশতী ও তার মেয়ে নুসরাত। তারা আমাদের জানিয়েছেন, নেপালে যাওয়ার পর তাদের প্রথমে আহতদের দেখতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেখান থেকে মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে মরদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া একটি করে ফরম পূরণ করে নেওয়া হয়।’