বগুড়ায় টার্মিনালের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ

 কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ

বগুড়া শহরের চারমাথা এলাকায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের জায়গা দখল করে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দল মার্কেট নির্মাণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও মার্কেট নির্মাণ করতে গিয়ে টার্মিনালের গণসৌচাগার ভেঙে ফেলায় যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। মার্কেট নির্মাণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বগুড়া পৌর মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবুর রহমান জানান, টার্মিনালের জায়গা দখল করে,মার্কেট নির্মাণের ব্যাপারে পৌরসভার অনুমতি নেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে মার্কেট নির্মাণের কথা স্বীকার করে পৌরসভার দুই নম্বর প্যানেল মেয়র ও  টার্মিনালের ইজারাদার আমিনুল ইসলাম জানান, চারলেন সড়কের কারণে সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাস্তার দুপাশের দোকানগুলো উচ্ছেদ করেছে। তাই মানবিক কারণে ব্যবসায়ীদের টার্মিনালের সীমানার ৫-৭ ফুট ভিতরে দোকান করতে বলা হয়েছে। এখানে কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়া বা মার্কেট বাণিজ্য করা হয়নি।

কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে চার মাথায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে প্রভাবশালীরা বেকারি, দই, মিস্টি, ফল, বিকাশ ও ফ্লেক্সিলোডসহ বিভিন্ন ব্যবসা করে আসছিল। তাদের কাছ থেকে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীনরা চাঁদা আদায় করতো। কিছু দিন আগে সরকার উত্তরবঙ্গ মহাসড়ক খ্যাত টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এটি এলেঙ্গা থেকে শুরু হয়ে সিরাজগঞ্জ সদর, বগুড়া সদর, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ হয়ে রংপুরের মিঠাপুকুরে গিয়ে শেষ হবে। বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ গত বছরের ২৯ নভেম্বর নওগাঁ সড়কের দুই পাশে ৫ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে। এর মধ্যে টার্মিনালের পাশে অর্ধ শতাধিক দোকান ঘর ছিল। অন্যদিকে বাস টার্মিনালের ইজারাদার ও যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম দোকান মালিকদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে টার্মিনালের ভিতরে স্থায়ী দোকান ঘর নির্মাণ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ১৬-১৭টি দোকানের নির্মাণ শেষ পর্যায়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, প্রতিটি দোকানের জন্য খরচ বাদেও ইজারাদারকে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে দিতে হয়েছে। এ মার্কেট বাণিজ্যে আমিনুল ইসলাম সামনে থাকলেও পেছনে ক্ষমতাসীন দলের আরও রাঘোব-বোয়াল রয়েছেন।

বগুড়া পৌরসভার নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ১৯৯১-৯২ সালে বিএনপি সরকারের আমলে মাঝারি শহর অবকাঠামো প্রকল্পের আওতায় শহরের চারমাথা এলাকায় বগুড়া-রংপুর মহাসড়ক ও বগুড়া-নওগাঁ সড়কের পাশে প্রায় সাড়ে তিন একর জমিতে বগুড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। ইজারার অর্থ পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়ন ও ব্যয়ে ব্যবহার করার কথা ছিল। টার্মিনালটি দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম ও তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণে আছে। চলতি বছর সব খরচ মিলিয়ে ১৮ লাখ টাকা ইজারা নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সূত্র মতে এ টার্মিনালের ওপর দিয়ে উত্তরাঞ্চলের ১১ জেলার ৭-৮ শতাধিক বাস-কোচ চলাচল করে। ওইসব গাড়িকে প্রতিদিন ৫০ টাকা করে টার্মিনাল চাঁদা (পৌর টোল)দিতে হয়। প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার টাকা  করে বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা চাঁদা উঠে।

এ প্রসঙ্গে বগুড়া পৌরসভার মেয়র বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট এ কে এম মাহবুবুর রহমান জানান, পৌরসভার অনুমোদন ছাড়াই টার্মিনালের জায়গায় দোকান ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে অন্যরা লাভবান হলেও টার্মিনাল সংকুচিত হয়ে পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। তিনি টার্মিনালের জায়গা দখলমুক্ত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ

টার্মিনালের ইজারাদার যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি ২০ বছর ধরে এ টার্মিনালের ইজারাদার। তিনি সামনে থাকলেও এর অর্ধেক আয় পায় বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাকি অর্ধেক বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপ।

তিনি জানান, সওজ কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ করায় ব্যবসায়ীরা বেকার হয়ে গেছে। তাই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের নিজ নিজ খরচে টার্মিনালের ভিতরে ৫-৭ ফুট জায়গায় দোকান নির্মাণ করতে বলা হয়েছে। বিনিময়ে কারও কাছ থেকে কোনও টাকা নেওয়া হয়নি। আর তিনি প্যানেল মেয়র হিসেবে এ ব্যাপারে পৌরসভায় আলোচনা করেছেন। পরবর্তীতে ওই সব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের কাছ থেকে পাওয়া টাকা টার্মিনালের মসজিদের জন্য ব্যয় করা হবে। 

আরও পড়ুন: মোবাইল উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশকে সম্মাননা দিয়েছেন ছয় চীনা নাগরিক