ছাত্রলীগ নেতা রবিউল হত্যার বিচার শুরু হয়নি ৫ বছরেও

রবিউল হত্যার বিচারের দাবিতে রাজশাহীতে ছাত্রলীগের মানববন্ধনপাঁচ বছর আগে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রবিউল ইসলাম রবি। ছয় জন তদন্ত কর্মকর্তার হাতবদলের পর এ বছরের শুরুর দিকে এই মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। তবে এখনও শুরু হয়নি এই মামলার বিচারকাজ।
জানতে চাইলে রবিউল হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পূর্বশত্রুতার জের ধরে অতর্কিত হামলা চালিয়ে রবিউলকে হত্যা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী ও অন্য সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে চার্জশিটে ১০ জনকে সুনির্দিষ্ট আসামি করা হয়েছে। কয়েক মাস আগেই এই প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত বিচার কাজ শুরু হবে।’
তদন্ত কর্মকর্তা রাশেদুল জানান, চার্জশিটে উল্লেখ করা অভিযুক্তরা হলেন— মেহেরচন্ডী এলাকার হকার হাসানের ছেলে সেতু, বাবু কসাইয়ের ছেলে বাবলা, বাবলু ড্রাইভারের ছেলে সোহাগ, আব্দুল জলিলের ছেলে সাঈদ, নেজাম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল, একরাম গার্ডের ছেলে নিতুল, আব্দুস সাত্তারের ছেলে রাজন, নূর মোহাম্মদ মোল্লার ছেলে কাজল, মোনছাদের ছেলে সুরুজ ও শাকিল। তাদের সবাই জামিনে রয়েছেন। চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিউলের ওপর হামলা চালিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে আসামীরা।
নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পার হলেও বিচার শেষ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ নিহত রবিউলের পরিবার। নিহতের মা ফিরোজা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যারা আমার রবিউলকে মেরেছে, তারা জেল থেকে বেরিয়ে গেছে। তারা এখনও মামলা তুলে নেওয়ার কথা বলে চাপ দেয়। না হলে তোমার এক ছেলেকে মারছি, অন্যদেরও মারবো। আমরা পুলিশকে জানিয়েছি, পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। বিচারও করছে না।’ তিনি মামলা দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করার দাবি জানান।
এদিকে, রবিউল হত্যার বিচার দাবিতে বুধবার (১৮ এপ্রিল) মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটের সামনে আয়োজিত কর্মসূচিতে অংশ নেন রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন, যুগ্ম-সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন, মতিহার থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল দ্বীপ প্রমুখ। মানববন্ধনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা দ্রুত রবিউল হত্যার হোতাদের বিচার শেষ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান চলাকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় রবিউলের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় তার। পরদিন ১৫ এপ্রিল রবিউলের বড় ভাই শফিউল ইসলাম নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান পুলিশের উপ-পরিদর্শক হাফিজ উদ্দিন। পরে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয় ওমর শরীফকে। তিনি এক বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ৫ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তাতে বাদী পক্ষ নারাজি দিয়ে ফের তদন্তের আবেদন করে। ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল মামলাটি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে স্থানান্তর করা হয়। পরে নিত্যপদ দাস, আশিকুজ্জামান ও রেজাউস সাদিক মামলাটি তদন্ত করেন। সবশেষ মামলার তদন্তে দায়িত্ব পান রাশেদুল ইসলাম।