সময় হলেও রাজশাহীর বাজারে নেই পর্যাপ্ত গোপালভোগ!

গোপালভোগ আমের বাগানঅপরিপক্ব আমের বাজারজাত ঠেকাতে গাছ থেকে আম পাড়ার সময়সীমা বাঁধা। যে আম যত আগে পাকে, সে আম পাড়ার দিন ঠিক করা হয়েছে তত আগে। সে অনুযায়ী গোপালভোগ জাতের আম পাড়ার দিন ঠিক ছিল রবিবার (২০ মে)। কিন্তু এবার এই জাতের আম পাকতে আরও সাত-আট দিন সময় লাগতে পারে বলে গাছ থেকে গোপালভোগ জাতের আম পাড়েননি  বেশিরভাগ আমচাষী। এর ফলে আমের দেশ রাজশাহীর বাজারেই এখনও খুব বেশি ওঠেনি গোপালভোগ জাতের আম । 
রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকার আম ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী গোপালভোগ আম ২০ মে বাজারে নিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের পাঁচটি বাগানে ঘুরে দেখি বাজারে নিয়ে আসার মতো আম গাছে এখনও পাকেনি। তাই আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। আর তাড়াহুড়া করে গাছ থেকে আম নামানো হলে পচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গোপালভোগ আমের বাগান
তিনি আরও বলেন, আমাদের বাজারে একজন আম নিয়ে এসেছিল। কিন্তু ক্রেতা তার আম দেখে ভিড়েনি। তবে এবার ক্রেতাদের ভালো আম খাওয়ার জন্য আমরা কয়েকদিন পরে বাজারে জাত ভেদে আম নিয়ে আসবো।
পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে সোমবার স্থানীয় (গুটি) জাতের আম নিয়ে এসেছিলেন আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, গোপাল ভোগ এবার সময় অনুযায়ী দেরিতে পাকছে। তাই আমরা এখনও বাজারে গুটি আম বিক্রি করছি। আশাকরি এক সপ্তাহের মধ্যে গোপালভোগ আম ব্যাপকভাবে পাওয়া যাবে।

Rajshahi-Mango-News-21.05-(3)তিনি আরও বলেন, লাভ নয়, ক্ষতির আশায় কেউ এবার আগেভাগে গাছ থেকে আম নামাচ্ছেন না। কারণ, এখন বিভিন্ন অঞ্চলে আম হয়। তাই বাজার নষ্ট হবে বলে কেউ এখন রাসায়নিক মিশানো আম বাজারে আনতে চান না। 

রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার এলাকার আম বিক্রেতা শাহীন আলম জানালেন, কয়েকদিন আগেই গুটি জাতের আম বাজারে এসেছে। তবে উন্নতজাতের আম গোপালভোগই প্রথম। আমের বাইরের খোসা সবুজ হলেও ভেতরটা হলদে। বাসায় দুই-তিনদিন রাখলে এমনিতেই পেকে যাবে। এজন্য কোনও রাসায়নিক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। প্রতি কেজি আম তিনি বিক্রি শুরু করেছেন ১২০ টাকা দরে। সরবরাহ বাড়লে আমের দাম কিছুটা কমবে।
এদিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে ৬ লাখ টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে থেকে জানা গেছে।

Rajshahi-Mango-News-21.05-(4)গত ৯ মে ফল গবেষণা কেন্দ্র ও কৃষি সম্প্রসারণ অধদিফতরের কর্মকর্তা, আমচাষি এবং ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের। বৈঠকে রাজশাহীতে আম নামানোর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ২০ মে থেকে। ওইদিন গোপালভোগ জাতের আম নামানো যাবে না বলে সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এছাড়া হিমসাগর, খিরসাপাত ও লক্ষ্মণভোগ আম নামানোর সময় নির্ধারণ করা হয় ১ জুন। আর ল্যাংড়া জাতের আম নামানো যাবে জুনের ৬ তারিখের পর থেকে। এছাড়া আম্রপালি ও ফজলি আম ১৬ জুন এবং আশ্বিনা জাতের আম ১ জুলাইয়ের পর থেকে চাষীরা গাছ থেকে নামাতে পারবেন না বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

Rajshahi-Mango-News-21.05-(6)রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের জানান, ঠিক করে দেওয়া সময় অনুযায়ী আম নামানো হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হচ্ছে। এ জন্য প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কৃষি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর আমের বাজার জমে উঠলে জেলা প্রশাসন থেকে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিনে আট ঘণ্টা করে ২৪ ঘণ্টা পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে দায়িত্ব পালন করবেন।
সোমবার (২১ মে) দুপুরে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে বাজার মনিটরিং করা হয়েছে উপজেলা প্রশাসন। পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, সব ব্যবসায়ীকে সতর্ক করতে সোমবার উপজেলার বানেশ্বরে আমেরহাট ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং অভিযানে ইফতার সামগ্রী প্রস্তুতকারী মিষ্টির দোকান ও হোটেলে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ব্যবসায়ীদের থেকে বিভিন্ন দ্রব্যমূল্য শোনা হয় এবং আমের ওজন ৪৫ কেজির বেশি না নেওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়। এসময় অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।

আম বাগানকৃষি সম্প্রসারণ রাজশাহী অঞ্চল অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ২৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। আর এই জেলায় অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। একইভাবে নওগাঁ জেলায় ১২ হাজার ৬৭১ হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৪২ মেট্রিক টন, নাটোরে ৪ হাজার ৮২৩ হেক্টর জমিতে ৫৬ হাজার ২১ মেট্রিক টন আমের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

Rajshahi-Mango-News-21.05-(13)
এছাড়া রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর রাজশাহী জেলায় ১৬ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৪৬৩ হেক্টর আম বাগান। আর বাগানে রয়েছে ২৪ লাখ ২৬ হাজার ১৮৯টি আমগাছ। কোনও দুর্যোগ না হলে এবার ২ লাখ ১৭ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন আশ্বিনা, ল্যাংড়া, লক্ষণভোগ, ক্ষিরসাপাত, আম্রপালি, তোতাপরি ও স্থানীয় জাতের গুটি আমের ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জেলার হিসাব মতে, সবচেয়ে বেশি আমের গাছ রয়েছে চারঘাট ও বাঘা উপজেলায়। এরমধ্যে চারঘাট উপজেলায় ৩ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৪৫০টি ও বাঘা উপজেলায় ৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৪টি আমগাছ রয়েছে।