আম নিয়ে ব্যস্ত রাজশাহীর কুরিয়ার সার্ভিসগুলো

আম নিয়ে ব্যস্ত রাজশাহীর কুরিয়ার সার্ভিসগুলো কারও সিরিয়ালের জন্য অপেক্ষা, কেউবা টাকা গুণছেন, কেউ আবার কলম দিয়ে নম্বর ঠিকানা লিখছেন, আর শ্রমিকরা আমের ঝুঁড়ি বেঁধে মাথায় করে ট্রাকে সাজাচ্ছেন। সবার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে কারও দম ফেলার সময় নেই। এসব দৃশ্য এখন রাজশাহী নগরীর কুরিয়ার সার্ভিসগুলোতে। এই অঞ্চলে তেমন শিল্প-কারখানা না থাকায় আমের মৌসুমে ব্যস্ত সময়পার করতে করতে হয় বেসরকারি সার্ভিস পরিবহনগুলোর।
রাজশাহীর সুস্বাদু আমের পরিচিতির কারণে এই অঞ্চলে অন্য জেলার মানুষের আনাগোনা বেশি হয়। এতে করে তারা আম কিনে কুরিয়ার সার্ভিসগুলোতে বুকিং দিয়ে আবার ফিরে যান। বছরের বিভিন্ন সময়ে যেমন-তেমনভাবে কুরিয়ারের ব্যবসা চললেও আমের মৌসুমে কুরিয়ার ব্যবসা হয় জমজমাট।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, সবাই এখন শুধু গোপালভোগ আম বেশি পাঠাচ্ছে। তবে এই সপ্তাহ শেষ হলেই আরও বিভিন্ন জাতের আম উঠবে, তখন তাদের ব্যবসা আরও বাড়বে।
করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিসের রাজশাহীর ম্যানেজার আলোম হোসেন বলেন, গতবারের চেয়ে এবার কম আম পাঠাচ্ছে মানুষ। প্রতিদিন এখন ২২০ ঝুঁড়ির মতো আম যাচ্ছে। এই ২২০ ঝুঁড়িতে ১০০ মণ আম থাকে। আমরা কেজি প্রতি ১২ টাকা করে রাখছি। আশা করি ঈদের পর আমাদের ব্যবসা আরও ভালো হবে। কারণ এর মাঝে ল্যাংড়া আম বাজারে আসলে মানুষ আরও বেশি আম পাঠাবে।
আম নিয়ে ব্যস্ত রাজশাহীর কুরিয়ার সার্ভিসগুলো করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিসে ঢাকায় আম পাঠাচ্ছেন নগরীর মোহম্মদ আলী। তিনি জানান, প্রত্যেক মৌসুমে ঢাকায় মাঝে মাঝে কয়েক মণ করে আম পাঠাতে হয়। এখন তিনি আট মণ আম পাঠাচ্ছেন।
এস এ পরিবহনের ম্যানেজার সাফিউল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের সার্ভিস রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মণ আম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছি। গতবারের চেয়ে ব্যবসা একটু কম হচ্ছে। ল্যাংড়া এবং আরও অনেক জাতের আম উঠলে ব্যবসা ভালো হবে। আমরা কেজিতে ১৫ টাকা রেখে আম পাঠাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমের জন্য আমরা আলাদা করে বুকিং সেন্টার খুলে রেখেছি। পাশাপাশি আমাদের কার্যালয়ের ভেতরে অন্য বুকিং নেওয়া হচ্ছে। তবে এসময় আমের বুকিংটা বেশি হয়। এজন্য মানুষের ভিড়ও বাড়ে।’
04এস এ কুরিয়ার সার্ভিসের আম পাঠাতে এসেছেন আলিফ হোসেন। তিনি জানান, ৬ মণ গোপালভোগ এবং ১ মণ অন্য আম ঢাকায় পাঠাচ্ছেন তিনি।
এদিকে রাজশাহীর বানেশ্বরে সবচেয়ে বড় আমের বাজার বসে। ২০ মে প্রশাসনের নিয়ম অনুযায়ী রাজশাহীর কৃষকরা আম পাড়তে শুরু করে। বাজারে আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে আমের ভ্যানগুলো। গত সপ্তাহ থেকে এখন আমের পরিমাণ অনেক বেশি। তবে নির্ধারিত স্থান থেকে আমের গাড়িগুলো রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের অর্ধেক জায়গা দখল করে নিয়েছে। ফলে বেড়েছে যানজট-দুর্ভোগ। এর ফলে ৫ মিনিটের রাস্তা পারাপার হতে পুরো ৩০ থেকে ৪০ মিনিট লাগছে। তবে যানজটকে বিরক্তিকর হিসেবে নিচ্ছেন না রাস্তায় পরিবহনের যাত্রী। তারা যেতে যেতে বাজারে আম বেচা বিক্রি দেখছেন।
বানেশ্বর বাজারের আম ব্যবসায়ী সাদেক আলী জানান, গত সপ্তাহ থেকে এখন অনেক বেশি আম আসছে। এখন প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ ট্রাক আম উঠছে। এর ফলেই এখানকার নির্ধারিত জায়গা থেকে আমের ভ্যানগুলো মহাসড়কে উঠতে বাধ্য হচ্ছে। এখানে পর্যাপ্ত জায়গা নেই আমের গাড়ি রাখার।
পুঠিয়া শিবপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা যানজট এড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
01রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘আগের থেকে এখন আমের গাড়িগুলো একটু বেশি আসছে। ফলে যানজট হচ্ছে। তবে আমরা এই যানজট এড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। বানেশ্বর গরুর হাটে অতিরিক্ত গাড়িগুলোকে রাখার ব্যবস্থা নিয়েছি। ট্রাফিক পুলিশের মোবাইল টিম আমাদের সহযোগিতা করছে। তবে পরবর্তীতে আমের মৌসুমে বানেশ্বর বাজারে আম কেনাবেচার জন্য ফাঁকা জায়গা নির্বাচিত করতে হবে। যাতে করে মহাসড়কে যানজট তৈরি না হয়। মানুষের ভোগান্তি যাতে না বাড়ে। সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’